দিল্লী নামা-৩

Jan 13, 2024ভ্রমন0 comments

ভারতের খাবার দাবার

আমাদের দেশে ম্যাকডোনাল্ডস, বার্গার কিং, অথবা সাবওয়ে বার্গারের একটা আলাদা ক্রেজ আছে। এখানে অবশ্য সবখানেই এরকম দু-তিনটা দোকান দেখতে পাওয়া যায়। চটজলদি ফাস্টফুড খুবই কমদামে খেয়ে ফেলা যায় সেগুলোতে। খিদে লাগলে তাই খুব বেশি ভাবাভাবির দরকার নাই। খাবারের পরিমান আর দামের তুলনা করলে আমাদের দেশেই বরঞ্চ সেটা বেশি।

তবে ভারতীয়দের খাবার বাঙ্গালির মুখে খুব একটা ভালো লাগার কথা না। এদের হরেক রকম তরকারির রঙ আছে, কিন্তু ঝাল নেই, নুন নেই। আর যদি নুন থাকে তবে সেটাও অনেক বেশি। অবশ্যই আমি সাধারন হোটেল আর রেস্তোরার কথা বলছি।

আমার যদিও সব সয়ে যায়, তবে সাথের লোকজন খুব একটা খেতে পারে না। ভেতো বাঙ্গালী হবার অসুবিধা। সবজায়গায় গিয়ে একমুঠো ভাত আর ডাল চায়।

দিল্লীর খাবার তাও কিছুটা খাওয়া যায়। মুঘলদের করে দিয়ে যাওয়া অভ্যাসের কারনে কিছু মসলাদার খাবার এখনও আপনার ভালো লাগবে। তবে একটু বাইরে গেলেই আপনি আফসোস করবেন দেশীয় খাবার আর মসলার স্বাদের জন্য।

সবচেয়ে মেজাজ খারাপ হয় এরা বিরিয়ানির নামে যেটা বেচে সেটা খেলে। আমাদের ঢাকাইয়া বিরিয়ানীর মত সুগন্ধি চাল, তেল আর মসলা একদম নেই।

দিল্লী নামা-৩ 1

দেখলে মনে হয় বাসমতি চালের ভাতের সাথে হলুদ আর মাংসের ঝোল মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। না আছে স্বাদ, না আছে গন্ধ।

ভেজ-বিরিয়ানি নামে আরেকটা অখাদ্য আছে। আমি কোনভাবেই মেলাতে পারিনা, কিভাবে ভেজিটেবল দিয়ে বিরিয়ানি হয়! ভেজিটেবল দিয়ে কিছু বানালে সেটা বিরিয়ানি না হয়ে বড়জোর ফ্রাইড রাইস হতে পারে।

একটা খাবার অবশ্য আমি ভারতে আসলে সবসময়েই চেখে দেখার চেষ্টা করি, “পানিপুরি” – দেখতে আমাদের ফুচকার মত হলেও মসলায় বিস্তর ফারাক আছে। খেতে মন্দ না!

দিল্লী নামা-৩ 2

আমি ভোজন রসিক বলে আমার খাবার দাবারে কোন কিছুই বাদ যায় না। রাস্তার খাবার থেকে শুরু করে, দামি হোটেল কিংবা স্বস্তার ফাস্টফুড সব কিছুই আমি চেখে দেখতে চাই। কিন্তু আমাদের পুরান ঢাকার মত বিরিয়ানি পৃথিবীর আর কোথাও হয়না! বাইরে আসলে এটাই সবথেকে বেশি মিস করি।

ভারতের বর্ণবাদ নাকি ধর্মীয় বিভাজন?

আমি যতবারই ভারতে এসেছি এর আগে, তাদেরকে খুবই অতিথিপরায়ন পেয়েছি। এবার ঘটনার ব্যাতিক্রম পেলাম। ব্যপ্যারটা এমন না যে খুব স্থুলভাবে আপনার চোখে পড়বে, খুব নজর না দিলে খেয়াল করতে পারবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার খেলা নিয়ে ঝগড়াঝাটি অল্প কিছু মূর্খলোকের মাঝে থাকলেও, সেটার আঁচ বাস্তবে নেই। যেটা আছে সেটা কয়েকশ বছরের প্রাচীন আগুন।

বৃটিশরা শাসনের সুবিধার জন্য সবজায়গায় ‘Divide & Rule” খেলে গেছে। এমনকি বর্ডার টানার সময়ও সেই একই ধর্মীয় জুজু দেখিয়ে ভারত, পাকিস্তানের তৈরি করে গেছে। এর কিছু পরে বাংলাদেশ অবশ্যম্ভাবী ভাবে মানচিত্রে নিজের নাম লিখিয়ে নিল।

কারিগর কিন্তু আগে থেকেই জানত এই দাগ টানাটানির ফলে পরবর্তী একশত বছর ধরে কি হবে। সেই মুসলিম-হিন্দু রেষারেষি আজও ভারত মহাদেশ ছাড়তে পারল না।

আমি প্রথমে এসে উঠেছিলাম জাসোলাতে। সেটা মুসলিম প্রধান অঞ্চল। সেখানে থাকতেই ওবায়েদ আর শাহরুখ আমাকে বারবার বলছিল, এখন পরিস্থিতি খুব খারাপ, হিন্দু এলাকায় মুসলিমদের বাসা ভাড়া দিচ্ছেনা। তাদের কথাবার্তায় একটা কপট আতংক তৈরি করার চেষ্টা দেখেছি আমি তখন।

নয়ডাতে আমি প্রথম যেখানে বাসা ভাড়া নিতে চাইছিলাম সেটা নাকি মুসলিম বলে দেবে না। অন্তত নাফিস ভাই আমাকে সেটাই বলেছিল। এই নাফিস হচ্ছে এখানকার বাসার দালাল।

সবাই কেমন যেন একটা আতংক আর ঘৃনা ছড়ানোর চেষ্টায় আছে। নয়ডায় পরে যে বাসায় উঠলাম, এখানেও নাকি নানা সমস্যা আছে!!!

বাসা পরিষ্কার করার জন্য এক মহিলা এসেছিল প্রথমদিন, সে প্রচ্ছন্ন ভাবে বলে গেল এখানে মুখ ঢেকে বোরখা পরলে নাকি পুলিশ ধরে। আমি তার কথা শুনে হাসায় সে খুব হতাশ হয়েছে বলে মনে হয়েছে। তাকে বললাম, আমিতো বোরখা পরিনা, তাও যদি পুলিশ ধরে ধরুক।

মূলত, যা ঘটছে, তা হচ্ছে সাধারন জনগণের মাঝে একটা নিরব ঘৃণা দেখছি। মুসলিম আর হিন্দুদের মাঝে আগেও সমস্যা ছিল এদেশে কিন্তু একজন অভারতীয়দের কাছে সেটা এত প্রচ্ছন্নভাবে প্রকাশ করতে দেখিনি। এরা বলে ওরা খারাপ, ওরা বলে এরা খারাপ।

জাতিগত সমস্যা হিন্দু সমাজে আগেও ছিল, কিন্তু হটাত করে সেটা কেন এতো জোরেসোরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল বোঝা যাচ্ছে না। রাজনীতি একটা বিশাল কারন হতে পারে। এই উপমহাদেশের লোকেরা একে অপরকে ঘৃণা করার জন্য কোন না কোন একটা কারন খুঁজেই নেবে। বর্ণ আর ধর্ম এই দুই খেলা চলছে এখন ভারতে।

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This