আলিনা অধ্যায় – ৪

Mar 21, 2019আত্মকথন0 comments

আলিনার সাথে আমার চমৎকার সময় কেটে যায়। তার আবদারের পরিমান দিন দিন বাড়ছে আর আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে কিভাবে সামাল দেয়া যায় তা নিয়ে।

আমরা শিখছি প্রতিদিন নতুন করে আর নিজেরাও শিখাচ্ছি মেয়েকে যা পারছি। একটা জিনিস আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি, যদি সমাজে পরিবর্তন আনতে চান তবে পরিবর্তন আনতে হয় পরিবার থেকে।

দেশে অসভ্য মানুষের সংখ্যা বেশি কারন বেশিরভাগেরই পারিবারিক শিক্ষা এবং সমাজে চলার মত সহমর্মিতা নেই। এখন যারা যুবক বা বৃদ্ধ আছে তাদের দিয়ে সভ্যতা শেখানো প্রায় অসম্ভব একটা বিষয়। কারন মানুষ আদতে বদলায় না।

কিন্তু শিশুদের তৈরি করা যাবে যাতে জাতিগত ভাবে আমরা সভ্য নাগরিক হতে পারি।

উধাহরন স্বরুপ জাপানকে দেখতে পারেন।

আলিনার কথা ফিরে আসা যাক-

।। এক ।।

সেদিন প্লে ক্লে (Play Clay) দিয়ে তার খেলার পরে আমাকে এসে বলছে – বাবা দেখোতো আমার হাতে কি নাইস স্মেল আছে?

আমি গম্ভীর ভাবে হাত শুঁকে জানালাম “পঁচা স্মেল আসছে”

এবার তার হাত ধুতে হবে। হাজার হোক মেয়ে তো। সবসময় ফিটফাট আর নাইস স্মেল থাকা চাই। আমি বললাম, যাও তুমি হাত ধুয়ে আস, বাবা কাজ করছি।

সে গিয়ে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে আমাকে দেখাচ্ছে, এবার নাইস স্মেল আসে?

আমার হঠাত মনে হল লিকুইড সাবান তো তার ধরা ছোয়ার বাইরে তাহলে সে হাত ধুয়েছে কি দিয়ে?

ঠিক যা ভেবেছিলাম তাই … … তুমি পেস্ট দিয়ে হাত ধুয়েছ?

ঃ হাসি…। সাবান তো উপরে তাই পেস্ট দিয়ে বাবা… এখন নাইস স্মেল আসে না

কি আর বলব… আমি তার ক্রিয়েটিভিটিতে মুগ্ধ 🙁 ।

আলিনা অধ্যায় - ৪ 1
নেইল পলিশ যে কতবার দেয়া যায় –

।। দুই।।

ঘুম ফাঁকি দেয়া তার অন্যতম পছন্দের একটি কাজ। তাকে ঘুম পাড়ানোর কথা বলা হলেই শুরু হয় লাফালাফি।

বিকেলে ঘুমাতে হবে, তাকে আসতে বললাম। যথারিতি হট্টগোল।

ঃ আস… আমরা শুয়ে শুয়ে গল্প করি ঘুমাতে হবে না।

ঃ না… আ… আ… আ… আমার ঘুম আসে না।

ঃ আস বাবা তোমাকে একটা গল্প বলব, বাঘের গল্প।

এবার সে কান্না থামিয়ে আসল। কিন্তু আমার মাথায় আসছে না তাকে কি গল্প বলব। যাক আল্লাহ ভরসা… কত হাবিজাবি লিখি সারাদিন… একটা কিছু বানিয়ে বলে দিলেই হবে… আমি শিওর গল্পের মাঝখানে তার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই আর গল্প বলা হবে না।

ঃ বাবা… ঐ বাঘের গল্পটা বল… ঐযে একটা হালুম আছে না সেই বাঘের গল্প।

ঃ কোন হালুম মা? বাঘইতো একটা হালুম।

ঃ না… না… বাঘের গল্পের হালুম।

কাম সারছে… এতক্ষন খালি বাঘের গল্প ছিল এখন আবার হালুম ঢুকাতে হবে একটা… 🙁

ঃ আচ্ছা বলছি শোন, এক বার বিশাল বড় পাহাড়ে গিয়েছিলাম আমরা মনে আছে? আমি, তুমি আর মা? ওইখানে যে অনেক বড় জঙ্গল ছিল মনে আছে?

ঃ কবে বাবা? আমার তো মনে নাই। এই এত্তগুলা কালকে গিয়েছিলাম?

ঃ হুম… তোমার মনে নেই বোধহয়… কিন্তু আমার কাছে ছবি আছে।

ঃ তাহলে দেখাও…।

এইরে… গল্প দেখি ভিজুয়ালের দিকে চলে যাচ্ছে। এবার তাকে ছবি বের করে দেখানো শুরু হল গুগল ফটোস থেকে।

ঃ ওয়াও… আমাকে আবার নিয়ে যেও বাবা?

ঃ হুম যাবো…। বেশ অনেক্ষন ছবি দেখানোর পরেও সে গল্পের কথা ভোলে নি।

ঃ এবার বাঘের গল্প বলো, হালুম আছে না ঐটা…।

কি আর করা আমি আবার শুরু করলাম।

ঃ এইরকম একটা পাহাড়ের জঙ্গলে একটা বাঘ ছিল। ইয়া বড় বড় দাঁত। যাকে সামনে পায় তাকেই কামড় দেয়।

ঃ আলিনার থেকেও বড় দাঁত?

ঃ অবশ্যই, কিন্তু বাঘটা বুড়ো হয়ে গেছিল তো, তাই আর শিকার ধরতে পারত না। না খেয়ে খেয়ে তার মরার দশা।

ঃ কেন… ওইখানে দোকান নেই?

ঃ বাঘ কি দোকানে যাবে রে বোকা? জঙ্গলে দোকান কোথা থেকে আসবে? 🙁

ঃ তাহলে ও কি করবে?

ঃ বাঘটা তখন ঠিক করল খাবারের খোঁজে জঙ্গলের বাইরে গ্রামে যাবে। আর যেতে হবে রাতের বেলা। তখন চুপি চুপি গিয়ে গ্রাম থেকে গরু, ছাগল ধরে নিয়ে আসবে খাবার জন্য।

তাই সে রাতের বেলা গ্রামে গেল… আস্তে আস্তে গিয়ে গোয়াল ঘরের সামনে গেল… সেখানে দেখল একটা গরু বাঁধা আছে।

ঃ গরুটা কি বলল?… গরু হাম্বা … হাম্বা… বলে নি?

ঃ বলেছে তো… আরো বলেছে … বাঘ বস … বাঘ বস … আমাকে খাবেন না। দেখছেন না আমি কত শুকনা… আমার এক্টুও মাংশ নেই গায়ে। আজকে আমাকে ছেড়ে দেন কালকে আসেন, কালকে আমি খেয়েদেয়ে মটু হয়ে যাব, তখন আমাকে খাবেন।

ঃ তখন বাঘটা কি বলল?

ঃ বলল… আচ্ছা ঠিক আছে, কালকে আসব। তুই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া কর।

ঃ কালকে তাহলে বাঘ এসে কি বলবে?

ঃকি আর বলবে, গরুটা কে পেলে খেয়ে ফেলবে।

ঃ নাহ… হবে না…। কালকে বাঘ আসার আগেই গরুটা মেক-আপ করে ফেলবে। লিপিস্টিক দিয়ে, পাউডার দিয়ে, নেইল পলিশ দিয়ে… … একদম দিয়ে ফেলবে!

আমি হতবাক, গল্প কোন দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পারছি না। বললাম, “তাহলে মেক-আপ দেয়ার পরে বাঘটা আর চিনতে পারবে না যে এটা একটা গরু?”

ঃ না… না… বাঘ তখন আর তাকে খাবে না… বলবে ওয়াও… ওয়াও… ওয়াও… হাউ নাইস। আর গরু বলবে হাম্বা…আ হাম্বা আ…।

আমি চুপ। এইটারে কিভাবে বুঝাব মেক-আপ কোন অস্ত্র না। পরের প্রশ্ন –

ঃ বাঘ কি আমাকেও খেয়ে ফেলবে?

ঃ হুম… বাঘ সবাইকে খেয়ে ফেলবে। বাবাকে পেলেও খেয়ে ফেলবে। বাঘের অনেক শক্তি।

এইবার কঠিন প্রশ্নঃ

ঃ বাঘ কি হিজলকেও খেয়ে ফেলবে?

হিজল মানে হিজরা, তার মার সাথে গিয়ে সে রাস্তায় হিজরা দেখেছে, তাদের হাতি তালি দেয়া দেখেছে এবং তাকে বলা হয়েছে দুষ্ট বাবুদের হিজরারা ধরে নিয়ে যায়। তার ভাষায় এটা এখন হিজল। 🙂

ঃ হিজল হোক আর ঝাউ গাছ হোক বাঘ সবাইকে খেয়ে ফেলবে। বাঘের কাছে সব মানুষই সমান।

… এবং প্রশ্নবান চলছিল ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে আর হালুম যুক্ত বাঘের গল্প বলতে হয়নি।


0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This