স্টোরে তার নাই…

May 10, 2023দেশ ভাবনা0 comments

এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা, তাই খুব বেশি রাখঢাক করে রঙচং চড়াতে চাইনা।

আমি কামরাংগীরচর থাকাকালীন একটা টিএনটির টেলিফোন লাইন নিয়েছিলাম। অনলাইনে আবেদন করার মাত্র দুইদিনের মাথায় অফিস থেকে লোক এসে লাগিয়ে দিয়ে যায়। আমাকে আলাদা করে কোনো টাকা পয়সা লেনদেন করতে হয়নি। তবে কিছু “তার” বেশি লাগায় সেটার জন্য আলাদাভাবে খরচা দিতে হয়েছে।

আমি ভেবেছি বাহ, আইসিইউতে থাকা একটা কোম্পানি দেখি ভালোভাবে গ্রাহক সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। অথচ শুনেছি একসময় এই টেলিফোনের লাইন নিতে ঘুষ দিতে হোত হাজার হাজার টাকা। আর মাসের পর মাস ঘোরাঘুরিতো ছিলই।

এলাকা পরিবর্তন করলাম একসময়। পুরাতন লাইন নতুন এলাকায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করলাম। সেটা হবার নয়। এপ্লিকেশন দিয়ে এটা বন্ধ করতে হবে। নতুন লাইনের জন্য আবার ডিমান্ড চার্জ জমা দিতে হবে।

গেলাম তাদের নীলক্ষেত অফিসে। এক অফিসার সেখানে বসে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। রুমে কেউ নাই। পুরো অফিসটাই একটা ভূতের বাড়ির মত লাগে। জানালেন ডিমান্ড নোটের কপি আর লাস্ট পেমেন্ট এর কপি লাগবে। আমি বিনীত ভাবে বললাম এতদিন পরে এগুলো কোথায় পাবো? আমার আইডি আর ফোন নাম্বার দিয়ে চেক করে দেখেন তাহলেই তো পাবার কথা।

কিন্তু আবৃত্তিকার তার সিদ্ধান্তে অটল। কাগজ না থাকলে তিনি জিডি করে আসার পরামর্শ দিলেন। আমি বিফল মনোরথে ফেরত আসি। ডিজিটাল যুগে এত কাগজপত্রের ঝামেলায় যেতে হবে কেন? যেখানে গ্রাহক নিজে উপস্থিত আছে তার এনাইডি নিয়ে?

বাসায় এসে অনেক খুঁজে মেইল থেকে বছর দুয়েক আগের ডিমাণ্ড নোটের কপি আর পেমেন্ট স্লিপ বের করলাম। অথচ এই তথ্য যদি আমাকে প্রথমেই দিয়ে দেয়া হোত এগুলো নিয়েই আমি যেতাম, এই দুই তিনবার দৌড়াদৌড়ির কোন মানে নাই।

সেই লাইন এখনো বন্ধ হয়নি… আমি আপ্লিকেশন দিয়ে এসেছি। তবে আশার বিষয় হচ্ছে নতুন করে মাসিক বিলও জেনারেট হচ্ছে না।

এবার আসি নতুন লাইন সম্পর্কে। অনলাইনেই এপ্লিকেশন দিলাম। তাদের এপটা বেশ সুন্দর আর পরিষ্কার ইন্টারফেস। এবারও লোক আসল, কিন্তু স্টোরে তার নাই। তারের খরচ দিতে হবে তবেই সে তার কিনে এনে লাইন দিতে পারবে।

নে বাবা… দিলাম। হাজার হোক সরকারি কাজের লোক… কিছু না খসালে কি হয়!

কয়েক মাস পরে একদিন দেখি লাইন ডেড। মাসখানেক ডেড অবস্থায় পড়ে থাকার পরে আবার মোবাইল এপে অভিযোগ রাখলাম।

লোক এলো। বলল নীচ থেকে কেউ তার কেটে নিয়ে চলে গেছে।

আমার করনীয় কি এখানে? এই তার তো কাপড় শুকাতে দেয়া বাদে অন্যকোন কাজে লাগবে না। কে চুরি করবে?

স্টোরে তার নাই, আপনি তারের খরচ দিলে লাগিয়ে দিতে পারব।

দিলাম তাকে হাজার টাকা। ২০ মিনিটের মধ্যে তার এনে লাগিয়ে দিল, লাইন ঠিক। এই অতি অল্প সময়ে তার কোথা থেকে আসল সেটা জানার অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তার সময়ানুবর্তিতা দেখে জিজ্ঞেস করতে মন সায় দিলো না।

তার আনতে কত গিয়েছে ভাই?

৭৫০ টাকা।

বাকি টাকা যথারীতি আমাকে ফেরত দিল না, আর আমিও চাইলাম না। হাজার হোক কোম্পানির লোক।

আমার নাম্বার রাখেন, সমস্যা হইলে অফিসে কমপ্লেন না দিয়ে আমারে ফোন দিয়েন।

জ্বী জনাব। আমি মনে মনে বলি। যখনি লাইন ডেড দেখব, আমি ধরে নেব স্টোরে তার নাই।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে টেলিফোন লাইন দিয়ে কি করি?

ঐ যে, একটা বিলের কাগজ। যেটাতে নিজের নাম লেখা আছে ঠিকানা সহ।

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This