আমার আমি ১০ঃ যা হতে চেয়েছিলাম

May 29, 2024আত্মকথন0 comments

আমার লেখালেখির বয়স অনেক। স্কুলে থাকতেই আমি প্রথম আলোর বন্ধুসভায় লেখা পাঠানো শুরু করেছিলাম। ছড়ানো ছিটানো ভাবে নানা পত্রিকা আর কিশোর ম্যাগাজিনের জন্য লিখেছি। তার কোনটাই আমার কাছে এখন আর নেই। গুছিয়ে লেখা বলতে যা বোঝায় তা শুরু করেছি আমার কন্যার বয়স ছয় বছর হবার পর থেকে।

অথচ ছোটবেলা থেকেই আমার শখ ছিলো, বড় হয়ে লেখক হবো। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার। স্কুলের খাতায় এই নিয়ে আমাদের রচনা আর প্যারাগ্রাফও লিখতে হয়েছে। আমার খুব ইচ্ছে করত তখন জীবনের এই লক্ষ্য নিয়ে লিখতে। কিন্তু ভয়ে লিখতাম না। এটা একটা হাস্যকর ব্যপার হবে যে আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই না। অথচ সব বন্ধুরা খাতায় তখন তাই লিখত।

তবু আমি লেখকই হতে চাইতাম। এখনও তাই চাই। খুব গোপনে আশা পোষন করি, একদিন সকল সাংসারিক ঝুট ঝামেলা শেষ করে, খালি কলম আর কাগজ নিয়ে বসে পড়ব। সারাদিন পড়ব আর রাতে লিখব!

ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখারও আশাও পোষন করি। তবে আমার সব থেকে পছন্দ অনলাইনে নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করা। এমনকি হাল আমলের ফেইসবুকেও খুব বেশি লেখা লিখতে আমার ভালো লাগে না। আমি লেখক হতে চাই- এই ইচ্ছাটা পোষন করে আমি কিন্তু বসে নেই। যখন যেভাবে পারছি লিখছি। তবে সবচেয়ে পছন্দ সায়েন্স ফিকশন লেখা।

আসিমভ আর জুলভার্ন আমার প্রিয় হলেও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সায়েন্স ফিকশন আমি পড়েছি হুমায়ূন আহমেদের লেখাতেই। বাংলায় মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রচুর সায়েন্স ফিকশন থাকলেও আমার পছন্দ হুমায়ূন আহমেদের সায়েন্স ফিকশন। জুতসই অনুবাদ না করতে পারায় বেশিরভাগ বাঙ্গালী অনুবাদকের লেখা আমার ভালো লাগে না।

একটা রহস্য থাকত হুমায়ূন স্যারের লেখায়। সায়েন্স ফিকশনের উর্ধ্বে উঠেও মহাবিশ্বের রহস্যময়তার দিকে আঙুল তুলেছিলেন তিনি। ভালোবাসার শুরুটা সম্ভবত সেখান থেকেই।

অনলাইনে লেখালেখির আরেকটা সুবিধা হচ্ছে আমি যা ইচ্ছে লিখতে পারছি। আমার পাঠক সংখ্যা খুবই কম হওয়াতে আমাকে জবাবদিহিও করতে হয়না কারো কাছে। কোন পারিশ্রমিক পাওয়ার লোভ নেই, ফরমায়েশ নেই। আমার বনে আমিই রাজা টাইপের।

নিজের মত করে লিখতেই আনন্দ লাগে। এই ছোট্ট জীবনের শেষভাগটা তাই লিখেই কাটিয়ে দিতে চাই।

সাই-ফাই ঘরানার বাংলা উপন্যাস বললে, হুমায়ূন আহমেদের “তারা তিনজন” – বইটিই আমি প্রথম পড়েছিলাম। কি এক অদ্ভুত ঘোরে চলে গিয়েছিলাম বইটা পড়ে! লেখকের ভৌতিক আর হিমুর চরিত্র থেকেও বেশি রহস্যময় লাগত আমার তার বিজ্ঞান কল্পকাহিনী গুলো। এত আবেগ নিয়ে তিনি কল্পনা করতে পারেন বলেই তিনি একজন হুমায়ূন হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার বিজ্ঞান কল্পকাহিনী গুলোতে তাই – বিজ্ঞানের খটমটে টার্ম অনেক কম, যুক্তি আর আবেগ বেশি, সাথে আছে অপার রহস্য।

বাংলা সাহিত্যে এর পর যার লেখা আমার ভালো লাগত তিনি সত্যজিৎ রায়। অসাধারন এই লেখকের কল্পকাহিনী গুলোতে বুঁদ হয়ে যেতে হয় একবার পড়া শুরু করলে। প্রেমের উপন্যাস আমাকে খুব বেশি টানে না। জগতের রহস্য টানে, তুমুলভাবে। আশে পাশে এত এত অজানা, তার হিসেব নিকেশ করতেই কেটে যাবে কয়েক মানব জন্ম। আফসোস অনেক অল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছি। বিজ্ঞান এখনও এতদূর আগাতে পারেনি যে আমাকে কয়েকশ বছরের নিশ্চিন্ত জীবন উপহার দেবে। হয়ত জীবন একারনেই দরকারের থেকে আরো বেশি সুন্দর।

লেখালেখি করে জীবিকা চালানো দুষ্কর। তাই আমি জড়িয়ে গিয়েছি আইটি প্রফেশনে। এখানে স্বাধীনতা আছে। ন’টা-পাঁচটার অফিস ধরতে হয় না। কাউকে অনবরত স্যার বলে তেলাতে হয় না। এটুকু প্রাপ্তি আমার আছে। সবাই যখন হেঁটেছে সহজ পথে আমি উল্টো পথে চলেছি। এই বেশ ভালো আছি।

এখানে যদিও আমার কিছু দূরদর্শিতা ছিলো, আমি দশ-বারো বছর আগে থেকেই বিশ্বাস করতাম ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে প্রযুক্তির। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। মানুষ সার্টিফিকেট এর বদলে কাজের মূল্যায়ন বেশি করবে। সেই সাথে আমার নিজের লেখালেখির জন্যও আমার অঢেল সময় দরকার। তাই আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেই সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম, জীবনে কোনদিন চাকুরী করব না। এখনও পর্যন্ত আমি আমার এই সিদ্বান্তের জন্য পস্তাইনি।

আমার বয়স এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই। পেছন ফিরে তাকালে নিজের করা ভুলগুলো দেখি আর ভাবি আরেকবার ফিরে যেতে পারলে কি একই ভুলগুলো আবার করতাম?

হয়ত করতাম…।

কারন এই ভুলগুলো করেই আজকের এই আমি।

মানুষ হিসেবে এই মহাবিশ্বের স্কেলে আমরা নগন্য, হয়ত শুন্য। আমাদের যত আস্ফালন আর স্মৃতিকাতরতা, ধর্ম সাহিত্য আর রাজনীতি সব কিছুই একটা ছোট্ট নীল বিন্দুর মধ্যে। তবে এটাও সত্যি, আমরা হচ্ছি মহাবিশ্বের সেই অংশ যে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করতে শিখেছে, আমরা কোথা থেকে এসেছি আর কেন এসেছি?

আমাদের এই মহাবিশ্বের পরে কি আছে?

অনেকটা যেন মহাবিশ্ব নিজের অস্তিত্ব নিয়ে জানার জন্যই আমাদের তৈরি করেছে। কে জানে, হয়ত আমরাই প্রথম বা শেষ নই। এই সৃষ্টির খেলা অনবরত চলছেই।

রহস্য…। অসীম মহাবিশ্ব্ব আমাদের জন্য অনেক রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। একজীবন এইটা অনুসন্ধান করে কাটিয়ে দিতে চাই।

Delwar Jahan- দেলোয়ার জাহান
এই ছবিটা আমার কন্যার তুলে দেয়া। হাতে মোবাইল পেলে সে নানাভাবে আমার অদ্ভুত ছবি তুলে দেয়।

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This