আমি জয়িতার চোখের দিকে তাঁকিয়ে আছি। বয়সে সে আমার থেকে বেশ ক’বছর ছোট হবে। কিন্তু এই বেগুনি শাড়িটায় তাকে আমার থেকেও বড় লাগছে। হটাত করে মনে হচ্ছে সে আমার চিন্তার থেকেও অনেক বড় হয়ে গেছে। কফি শপটায় প্রচন্ড হট্টগোল। অনেক রঙিন কপোত-কপোতি। আমি এখানে আগে কখনো আসি নি। জয়িতাদের সামাজিক কালচারে আমাকে ঠিক মানায় না। এই জেনারেশনের হুট করে আসা আবেগে আমি ভেসে যাই না। আমার মাস শেষের দশ টাকাও আমাকে খরচ করে হিসাব করতে হয়।

– এভাবে তাঁকিয়েই থাকবেন? জয়িতা মিষ্টি একটা হাসি দিল।

আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। “আজকে কি উপলক্ষে এখানে এসেছি?”

– আজকে আমার জন্মদিন তাই! জয়িতা মিষ্টি হাসে।
– না… আজ তোমার আমার কারোরই জন্মদিন না। এমনকি তোমার মা-বাবার বিবাহ বার্ষিকীও নয়।
– আপনার সব দিন তারিখ মুখস্থ থাকে… তাই না?
– সবারটা থাকে না, তোমারটা থাকে।
– তার মানে আমি আপনার কাছে স্পেশাল পার্সন?

জয়িতার মুচকি হাসি চওড়া হচ্ছে। এ বয়সের মেয়েরা মনে করে হাসি দিয়ে পৃথিবীর সব কিছু জয় করে ফেলা যায়। অবচেতনে জয়িতা তাই করার চেষ্টা করছে।

– না…। তোমাকে দীর্ঘদিন হাউজ টিউটর হিসেবে পড়ানোর কারনে তোমার মায়ের সাথে আমাকে অনেক গল্প করতে হোত। তোমার যখন ক্লাস থেকে আসতে দেরী হয়ে যেত আমি বসে বসে চা খেতাম আর সেগুলো শুনতাম। একারনেই অনেক কিছু মনে আছে।

– কিন্তু মাতো বলে আপনি একদম চুপচাপ থাকতেন, কোন কথা জিজ্ঞেস করলে হুঁ-হা করে জবাব সারেন।

– ঠিক, কারন তোমার মা আসলে উত্তর জানতে চাইতেন না। প্রশ্ন করে নিজেই তার জবাব দিতেন। আমি শুধুই নির্বাক শ্রোতা ছিলাম।

জয়িতা খিলখিল করে হাসে। ওর হাসিটা আসলেই সুন্দর। কপালে আবার একটা হলুদ টিপ ও দিয়েছে। আচ্ছা নীল শাড়ির সাথে হলুদ টিপ কেন? নীলের সাথে নীল হবে না? জয়িতাকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে রহস্য, কিন্তু মন চাইছে না।

– মা একা থাকেন সবসময়, তাই আপনাকে সামনে পেলেই বকবক করতে থাকেন। আমার সাথে কিন্তু এত বকবক করেন না। মা বলেছে আপনি রোবট শ্রেনীর মানুষ।

– হতে পারে…। এটা তোমার মা বলেছে?
– না, আমি বললাম…। রাগ করেছেন?

– না রাগ করিনি, হতাশ হয়েছি। অহেতুক কথার মারপ্যাচ আমার ভালো লাগে না। সেই বয়েসটা আমি জীবনের কঠিন অভিজ্ঞতা দিয়ে পার করে এসেছি।

জয়িতা কিছুটা থমকায়, কি যেন চিন্তা করে। তারপর আবার স্বভাবসুলভ গলায় বলে, “আজকে একটা স্পেশাল দিন, কিন্তু সেটা আপনার মনে নেই।”

– সে জন্যেই আমাকে এখানে ডেকেছ? তোমার মা জানলে কিন্তু ভালোভাবে নেবেন না।

– চিল… স্যার। এত আতঙ্কিত হবার কিছু নাই। আমি মাকে বলেই এসেছি। মাকে যতটা বোকা আর বাচাল ভাবেন আমার মা তার থেকেও বেশি বুদ্ধিমতী।

জয়িতার মা বুদ্ধিমতী এটা আমি জানি, কিন্তু হাসি দিয়ে বিশ্ব জয় করতে যাওয়া জয়িতা জানে না ঠিক কতটা বোকা সে।

– ভালো করেছ, মাকে বলে আসা ভালো। কিন্তু আসার কারনটা জানতে পারলে আরো ভালো লাগতো। তাও আবার এরকম সেজেগুজে!

– আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে না?
– দেখাচ্ছে। বিশেষ কারো জন্য সেজেছো?
– আপনি না একটা বোকার হদ্দ। মেয়েরা এমনিই সাজে। আর আমাকে যে মাস্টার মাস্টার ভাব নিয়ে কথা বলছেন এটা না করলেও পারেন। আমি অতটা ছোটও আর নেই। এই বছর বিশে পড়ব।

– মেয়েরা হুট করে কাউকে বয়স বলে না। আমি এবার কিছুটা হাসি। বড় হবার কি আপ্রান চেষ্টা মেয়েটার।
– আপনি কি সেই হুট করে চলে আসা মানুষের কেউ?
– কি জানি। আমি অনেকটা তোমাদের পোষা টিয়া পাখির মত। আমার প্রচন্ড দূর্দিনে তোমার মা আমাকে যে সাহায্য করেছেন, এই ঢাকা শহরে টিকে থাকতে দিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি তোমাদের পারিবারিক বন্ধু বা পরিবারের কেউ নই।

– আপনি না সবসময় খুব কঠিন করে কথা বলেন। আজকে আপনাকে ট্রিট দিতে এনেছি। বলুন কি খাবেন?
– এ জায়গাটা ভালো লাগছে না। আমি আশেপাশে তাঁকাই। অদূরেই একদল কিশোরী। তাদের একজন ফট করেই সিগারেট ধরিয়েছে। কিন্তু সেদিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। কাচের এপাশ থেকে আমি অবাক হয়ে দেখি। আমার কল্পনার কিশোরী আর উচ্ছল তরুণী এরা নয়। এরা অনেক বেশী আধুনিক আমার চিন্তার চেয়ে। আমি বোধহয় সেকেলেই রয়ে গেলাম।

একই দেশে কতরকম বৈচিত্র। কেউ আপাদমস্তক কালো কাপড়ে নিজেক আবৃত করে ভয়ে ভয়ে রাস্তায় চলে। আবার কিছু কিশোরী উদ্দাম জীবনে স্বাধীনতার অপব্যবহার করে। একদিকে সংস্কৃতি, আরেকদিকে কুসংস্কার, একসাথে সমান্তরালে চলছে।

ঢাকা শহরের এ অংশের জীবন চলে অন্যসময় ধরে, আমি এখানে খুব বেমানান, জয়িতা আমাকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছ কেন সেটা এখনও পরিষ্কার করে বলেনি।

– অন্য কোথাও যাবেন? আজকে আপনি যেখানে খেতে চান, সেখানেই আপনাকে নিয়ে যাব।
– কিন্তু উপলক্ষ না বললে কি করে যাই? আমি ভেবেছিলাম তোমার জরুরী কোন দরকার তাই ডেকেছ। এখন দেখছি তেমন কিছু না।

– আমি আপনাকে আসতে বলেছি এটাই জরুরী মনে হচ্ছে না?
– আমি তোমার হাউস টিউটর ছিলাম, প্রেমিক নই। আমি জয়িতাকে কিছুটা অপ্রস্তুত করে দিতে কথাটা বললাম।

কিন্তু জয়িতা দমবার পাত্র নয়। তার মিষ্টি হাসি একটুও বিচলিত হল না।

– সে আমি জানি… কিন্তু আপনি আমাকে আর পড়াতে আসবেন না… কেন বলেছেন মাকে?
– আমি একটা চাকরি পেয়েছি জয়িতা। আন্টিকে সেটা বলেও এসেছি।
– শুনেছি… মার কাছ থেকে। কিন্তু আপনি আমাকে কেন বলেননি সরাসরি?
– কারন আমার বেতন তোমার মা’ই দিত। আর ছাত্রীর সাথে এসব ব্যপারে কেউ আলোচনা করে না।
– চাকরি ছাড়ার আগে তিন মাসের নোটিস দিতে হয় জানেন?
– আগে কখনও চাকরি করিনি আর টিউশনিকে চাকরি বলছ কেন?
– আপনি একদম রসকষহীন একটা মানুষ। কবিতা লেখেন কি করে?

এবার আমার চমকাবার পালা। আমি কবিতা লিখি এটা জয়িতার জানার কথা নয়। ছদ্মনামে অনেক পত্রিকায় লিখি, কিন্তু কখনও এটা নিয়ে পরিচিত কারো সাথেই আলোচনা করি না আমি।

মেয়েটা আমার চেহারা মাপছে, দেখার চেষ্টা করছে আমি যে কবিতা লিখি এটা সে জানে, বলার পর আমার কি অভিব্যাক্তি হয়। আমিও দমবার পাত্র নই। অবাক না হবার ভান করলাম।

– কবিদের সবসময় কাব্যের ভাষায় কথা বলতে হয়?
– না সেটা না, তবে কিছুটা রোমান্টিক ভাব থাকে না!

– না থাকে না। যে কবির পেট চলে সপ্তাহে তিনটা টিউশনি করে আর চাকরির ভাইবা দিয়ে, সে আবেগ পকেটে পুরে রাখে। সবার সামনে আনে না।
– আর কি করে কবিরা?
– চায়ের কাপে চিনি কম হলে দোকানীর সাথে চিল্লায়। এরকম কফিশপে বসে পাঁচশ টাকার কফি খায় না।

জয়িতা হাসে। তার এই হাসি দেখলে অনেক যুবকেরই মাথা ঘুরে যাবে।

– তোমার বিশেষ দিনের কথা বলো। আমি প্রসঙ্গ পাল্টাবার চেষ্টা করি। জয়িতা সে ফাঁদে পা দেয় না।

– স্যার আপনি জানতে চাইলেন না… আমি কিভাবে জানলাম যে আপনি কবিতা লেখেন। এটাতো কারো জানার কথা নয়!
– আমার কৌতুহল একটু কম।
– আপনি গরীব কবি। খিলখিল করে হাসে জয়িতা।
– বড়লোক কবি দেখেছ নাকি ঢাকা শহরে?
– না দেখিনি, পোয়েট্রি আমার ভালো লাগে না।

– না লাগারই কথা, তোমার ব্যস্ত জীবনের সাথে কবিতা যায় না।
– ঠিক আছে আপনি যখন জানতে চাইবেন না, আমিই বলি। আপনার নামে দুটো চিঠি এসেছে। জয়িতা ব্যাগ থেকে দুটো খাম বের করে দেয়। আমি কিছুটা অবাক হয়ে হাত বাড়াই। আমার সব চিঠি আমার নামে মেসে আসার কথা। আমি না থাকলেও মেসের ম্যানেজার ব্রজেন বাবু সেটা রেখে দেবে। এক সপ্তাহ ঢাকার বাইরে ছিলাম। কিন্তু এ চিঠি জয়িতার হাতে কেন?

– তুমি আমার মেসে গিয়েছিলে?
– হুম… ভীষন নোংরা, থাকেন কি করে? আপনার মেস ম্যানাজারের সাথে গল্প হয়েছে। একটু মিথ্যে বলেছি, আমি আপনার ফুপাতো বোন বলার পর এই “আর্জেন্ট” লেখা চিঠি দুটো আমার হাতে তুলে দিয়েছে।
– হুম…। আমি দেখলাম চিঠি দুটোর মুখ খোলা।
– আমি খুলে পড়েছি! লোভ সামলাতে পারিনি!
– গর্হিত কাজ, উচিত হয়নি। কিন্তু তোমাকে মাফ করে দিলাম।
– কোন জবটা করবেন? দুটো এপয়েন্টমেন্ট লেটার। জয়িতা স্বস্তির হাসি হাসে।
– যেটায় টাকা বেশি সেটা।
– মানে ব্যাংকের জব?
– মনে হয়।
– আপনার কবিতার কি হবে?
– এটাও কি ব্রজেন বাবু বলেছে, আমি কবিতা লিখি?
– না এটা আমি কিভাবে জেনেছি সেটা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। আপনার জন্য ধাঁধা।
– আমার বুদ্ধি কম, ধাঁধায় হেরে যাবো। আমার আসলে জানার ইচ্ছে নাই। কবিদেরও পেট চালাতে হয়। এদেশে আর যাই হোক লেখালেখি করে পেট চালানো খুব কষ্টের।
– এবার বুঝেছেন আজকে কেন আমি সেজেগুজে এসেছি?

– বুঝেছি। আমি এবার কিছুটা হাসি। আমারই উচিত তোমাকে ট্রিট দেয়া। তুমি সুসংবাদের বাহক হয়েছ।
– না সেটা চাইছি না…। ট্রিট আমিই আপনাকে দেব। আপনার এখনকার জবটা কোথায় স্যার?
– একটা প্রেসে, প্রুফ রিডারের কাজ। সময় হয়েছে ছেড়ে দেবার। কিন্তু মাস খানেকেই কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে।
– বলো তুমি কি খেতে চাও জয়িতা?

জয়িতা হাসে, তার সেই ভুবন ভোলানো হাসি। আমি ছুঁতে না পারা এই চাঁদ দেখে বড়ই আনন্দিত হই। হঠাত করেই এই অতি আধুনিক কফিশপকেও আর নিরানন্দ লাগছে না।

– আপনি বরঞ্চ আমাকে একটা কবিতা শোনান।

আমি উদাত্ত গলায় বলে উঠিঃ-

তুমি সব বোঝো মেয়ে,
আমায় বোঝো না
তোমার ঐ টোল পড়া গালে,
আমায় কেন খোঁজো না?
তোমার নীল শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে ডানা,
বদলে নীল, হলুদ রঙে তুমি সেজো না।

জয়িতার গালে লালের আভা দেখা যাচ্ছে। চুপ করে আশেপাশে দেখে নিল। অনেকেই এদিকে তাঁকাচ্ছে। এই কফিশপ শাহবাগের আড্ডা না। এখানে কেউ কবিতা পড়ে না।

– আমি আসলে নীল টিপ খুঁজে পাইনি। কিছুটা নরম স্বরে বলে জয়িতা।
– তাতে কিছু যায় আসে না। আমি এমনিই বললাম।
– আপনি হঠাত করেই এরকম না বোধক ছন্দ বানিয়ে ফেললেন? এটা কবিতা না ছড়া?
– এটা কিছুই না। হুট করে কবিতা তৈরি হয় না। মাংসের মত অনেকক্ষন কষাতে হয়। যখন ঝোলের রঙ গাঢ় হয়ে যাবে তখন কবিতার স্বাদ আসে।
– এই যা, এটা আবার কি রকম তুলনা হল? আপনাকে যতটা কঠিন ভেবেছিলাম অতটাও নিরামিষ নন আপনি।
– আমি সর্বভূক।

– বাসায় যাবেন? মা আপনার এই খবর পেলে খুশি হবে অনেক।
– যাব, সময় নিয়ে অন্যদিন যাবো। কিন্তু দয়া করে সেদিন আবার এরকম সাজগোজ করে থেকো না। কুড়ি বছর বাঙ্গালী মেয়ের জন্য অনেক। এসময় অনেক রঙিন আবেগ মনে খেলা করে। আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোন সমস্যা হোক।

– এত হেয়ালি করতে আমার ভালো লাগে না। আপনি কি কিছুই বোঝেন না, নাকি না বোঝার ভান ধরেন? জয়িতা কিছুটা রাগি গলায় বলে। মেয়েরাই পারে এরকম করতে, হুট করে রেগে যায় আবার অসীম মমতায় আগলে রাখে।

– তোমার এখন প্রেমে পড়ার বয়স। কিন্তু ভুল মানুষের প্রেমে পোড়ো না। চোখের ভাষা না বুঝতে পারার মত বোকা কবি আমি নই।

– কে ভুল মানুষ? আপনি না আমি?

– মানুষ হচ্ছে আয়নার মত জয়িতা। এই আয়নায় আমরা একে অন্যকে নিজের মত করেই দেখি। কিন্তু তোমার আমার পথ আলাদা, বেশ আলাদা। তোমাকে পড়ানো বন্ধ করে দেবার পেছনে এটাও একটা কারন।
– মা কিছু বলেছে আপনাকে?
– না কিছু বলেন নি। তবে মায়েদের সজাগ থাকতে হয়।
– মা ভাবে তিনি যা বলবেন আমি সেটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাবো।
– তুমি যেদিন মা হবে… সেদিন বুঝবে, তার আগে না।
– আমি কচি খুকি নই। নিজের ভালো মন্দ বোঝার বয়স আমার হয়েছে।

জয়িতার নাগের ডগায় ঘাম। রেগে গেলে মেয়েটার এমন হয়। আমার খুব ইচ্ছে করছিল হাত দিয়ে মুছে দিতে।

– বয়স হচ্ছে, আরো হবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা এখনো হয়নি তোমার।
– মাকে আমি ঘৃনা করি।
– টিকটক প্রজন্ম – মাকে ঘৃনা করার আগে নিজেকে ভালোবাসো। তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমার মায়ের আশির্বাদ আছে।
– আপনাকে কেন চলে যেত বলল?
– বলেনি… আমি বুঝে নিয়েছি। আর আমার চাকরিটাও হয়ে গেল।
– প্রেসের চাকরি…? ওটা করে আপনার চলত?
– এখন চলে যাবে, ভাগ্য সহায় হয়েছে।

জয়িতার চোখে পানি টলমল করছে।

– কাউকে ঘৃনা করার আগে জেনে রেখো, যে পরিমান ঘৃনা তুমি অন্যের জন্য পোষন করবে, প্রকৃতি তোমাকে ঠিক সে পরিমান ঘৃনাই ফেরত দেবে। যোগে- বিয়োগে কাটাকাটি হয়ে যাবে।

– আপনি আমাকে ভুলে যাবেন ক’দিন পরেই।
– না ভুলবো না। তবে ছাত্রীর সাথে প্রেমও করব না। একই শহরে থাকলে দেখা হয়েই যাবে। তোমার মায়ের কাছে আমি নানা বিষয়ে কৃতজ্ঞ, সেটা হুট করে নষ্ট হতে দিও না। আর পাঁচ কি সাত বছর পরেও যদি তোমার মনের আবেগ আজকের মতই থাকে, তবে তুমি যা বলবে আমি তাই করব।

– থাকবে…। জয়িতার চোখে পানি। কাদঁলেও গালে টোল পড়ে! কি অদ্ভুত! হাসি আর কান্নায় মানুষের চেহারা দেখতে একই রকম লাগে?

– সময় হলেই দেখা যাবে। এখন যে চিঠিটা আমাকে দেবার জন্য এনেছ সেটা দিয়ে যাও। আমি চাইনা এটা তোমার মায়ের হাতে পড়ুক।

জয়িতা অবাক হলেও বিনা বাক্যে তার ব্যাগ থেকে একটা হলুদ খাম বের করে দিল। আমি না দেখেই পকেটে চালান করে দিলাম।
– নীল রঙের খাম পাওনি?

– না, ফোঁপাতে ফোঁপাতে হেসে দিল জয়িতা। আপনি কি করে জানলেন আমি আপনার জন্য চিঠি লিখে এনেছি?

– একজন লেখক নির্লিপ্তভাবে তার পরিবেশ পর্যবেক্ষন করে। তোমার বারবার ব্যাগ চেপে ধরা, আমার এপয়ন্টমেন্ট লেটারগুলো দেবার সময় বেছে বেছে দেয়া, এসব কিছুই আমার নজর এড়ায়নি। আমি এটাও জানি তুমি চিঠিতে কয়েক লাইন কবিতা লেখার চেষ্টা করেছ।

– এটা সোজা, আমি আজ আপনাকে কবিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছি। আপনি অনুমানে বলেছেন। ঝড়ে বক মরে আর ফকিরের কেরামতি বাড়ে।

আমি হাসি… কিছু বলি না। জয়িতার চোখে আবার সেই উচ্ছলতা চলে এসেছে। আমি খুব মন দিয়ে চাইছি সময় ওর এই আবেগ কাটিয়ে দিক। পাঁচ বছর বলেছি, কিন্তু মোহ কেটে যেতে খুব বেশিদিন লাগে না। আমাদের পথ আলাদা, সব পথের দেখা হয়না।

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This