আলিনা অধ্যায় – ২

Feb 3, 2019আত্মকথন0 comments

মেয়েটা বড় হয়ে যাচ্ছে। নিজে নিজে খেলতে খেলতে কখন যেন চার বছরে পা দিয়ে ফেলল। তার নিজের আবেগ অনুভুতি আর ক্ষমার নিজস্ব একটা পরিভাষাও তৈরি হয়ে গেছে।

আমি স্বভাবতই আমার পরিবার নিয়ে বা নিজের শৈশব নিয়ে লিখি না। কারন কিছু টুকরো টুকরো আর এলেমেলো আনন্দ মুখর সময় বাদে আমার শৈশব পুরোটাই কেটেছে অদ্ভুত এক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে।

মনে আছে বেশির ভাগই, ভুলিনি উদ্দাম শৈশব।

আজ যখন আমার মেয়েটাকে চোখের সামনে বড় হতে দেখছি, নিজের শৈশবের স্মৃতি বারবার মনে পড়ে যায়। আমি মনে করার চেষ্টা করি। নিজে যা যা পাইনি চেষ্টা করছি মেয়েটাকে সেই সব অপ্রাপ্তির স্বাদ দিতে।

যখনই মনে হচ্ছে তার চাওয়ার পরিধি বড় হয়ে যাচ্ছে, আমাদের সাবধান হয়ে যেতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী বারবার আমাকে সাবধান করে দেয় আলিনাকে দামি খেলনা না কিনে দিতে। আবার কখনো কখনো আমি সাবধান করে দেই বেশী আদর না দেখাতে।

সন্তান পালনের কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাকরন নেই। আপনি আপনার সন্তানকে নিজের মত করে বড় করে তুলবেন। কে কার বাচ্চা কিভাবে পালে তার সাথে তুলনা করা নিতান্তই দুর্বল মনের পরিচয়।

আমি আমার সন্তানকে সবসময় সত্যিটা বলার চেষ্টা করি আর নিজেদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানাতে পিছপা হই না।

আলিনা আমাদের জামাই বউ এর মতই ঘোরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করে। প্রতিদিন একবার হলেও বাবার হাত ধরে তার একটু ঘুরে আসা আসা চাই। আমি বিরক্তির ভান ধরি, কিন্তু খুব ভালো লাগে যখন ছোট একটা হাত আমার হাত ধরে হাঁটতে থাকে আর নানা দরকারী টুকিটাকি প্রশ্ন চলতে থাকে।

মেয়েটা তার মায়ের ব্যপারে প্রচন্ড সচেতন। সে সব কিছুর ভাগ দেবে কিন্তু মায়ের সাথে কারো ভাগাভাগি হবে না।

একটা উধাহরন দেই। আলিনা কোথাও ডেকেরেটিভ লাইট দেখলেই বলবে আজকে তার বিয়ে হচ্ছে। বিয়েবাড়ি সাজানো হয় যে লাইট দিয়ে সেগুলো তার খুবই পছন্দ।

সেদিন রিকশা দিয়ে যাবার সময় এরকম লাইট দেখল রাস্তায়, তার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল। মায়ের কোল থেকে আমাকে বলল, দেখেছ বাবা আমার বিয়ে হচ্ছে…!

আমি মুখ গম্ভীর করে বললাম, তোর কয়বার বিয়ে হয় মাসে? আর কার কার সাথে হয়?

এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আলিনা দেয়নি। এত জটিলতা এখনো সে বোঝে না।

আমার বউ তখন বলল, তুমি কি জানো আলিনা… মা আর বাবার যে বিয়ে হয়েছে?

আলিনার সোজা কথা, না হবে না। এরকম হবে না।

মার কোলে বসে বসে সে মাকে বলছে, তোমাকে লাঠি দিয়ে মেরে দিব, একটা ঘুষি দিয়ে ফেলে দিব। তোমার সাথে কারো বিয়ে হবে না।

আমার হাসি দেখে কে। আমি জানতে চাইলাম তাহলে তোর সাথে কার বিয়ে হবে? তুই যে লাইট দেখলেই বলিস আজকে তোর বিয়ে হচ্ছে?

আলিনাঃ কেন বাবার সাথে…! বাবার সাথে আলিনার বিয়ে হবে, আর মা সাথে যাবে।

সোজা উত্তর, জটিলতা বিহীন। বিয়ে নামক এক জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতি সে দুজন প্রিয় মানুষ দিয়ে সামাল দিয়ে ফেলেছে।

একদিন তোর জগতটা আরো বড় হবে। তুই সংসারের আরো জটিল জটিল বিষয়ে জড়িয়ে যাবি। সেদিন যদি বাবা নাও থাকি, জেনে রাখিস বাবা তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

আলিনা অধ্যায় ২

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This