।। এক ।।
নাহ… সত্যিকারের কোন রাজপ্রাসাদ নয়। মানুষের বানানো চকচকে এক বিলাসবহুল ইট-পাথরের ইমারত।
সিলেট যাচ্ছি… দ্যা প্যালেস নামের রিসোর্টে। যখন এই লেখা লিখছি তখনও রওনা দেইনি। আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে।
আমার কন্যা জানে সকালে বেড়াতে যাবে। তাকে রাতেই বলা হয়েছে। তার মাতা জানাল এই উত্তেজনায় নাকি রাতে তার ঘুমই আসে না ঃ)।
আহ… কতদিন বাচ্চাদের মত এই নিখাদ উত্তেজনা বোধ করি না। ঘুরতে যাওয়াটাও কেমন মানিয়ে নিয়েছি। সেই শৈশব নাই। এখন কন্যার বিস্ময়ে আত্মতৃপ্তি আসে।
ঢাকা থেকে সিলেট যাবার অনেক গাড়ি আছে, সেগুলোতে করে চলে যেতে পারেন সিলেট। বাই এয়ারে গেলে সেখান থেকে রিসোর্টের নিজস্ব পিক-আপ আছে বোধহয়। আমার ঠিক জানা নেই।
রিসোর্টটা আসলে সিলেটেও না। এটা হবিগঞ্জে। সিলেট হাইওয়ে দিয়ে গেলে পুটিজুরী এলাকার বাহুবলে।
আমরা অবশ্য একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাচ্ছি। বাচ্চা-কাচ্চা সহ প্রায় পনের জনের গ্রুপ। একেক জন ঢাকার একেক জায়গায় থাকাতে পিক-আপ করতেই প্রথম ১.৩০ ঘন্টা চলে যাবে বলে আমার ধারনা।
এইদিকে ফেইসবুকে বন্ধু হিমুর তাড়া চলছে।
দেখা যাক… এবার ঠিক করেছি ঘুরতে ঘুরতেই লিখব। লেখা পড়ে অনেকেই জানতে চাইতে পারেন, কিভাবে গেলাম, কি খেলাম, কত ভাড়া। এইগুলাও আসবে, প্রয়োজনমত।
।। দুই ।।
অবশেষে বিশাল রাস্তা পেরিয়ে আমরা হবিগঞ্জে এলাম। বাঁশপাতা রেস্টুরেন্ট এ দুপুরের খাবার খাবার জন্য।
ঢাকা থেকে সিলেটের রাস্তা যতটা ভালো মনে করেছিলাম, তার থেকে বেশি ভাংচুর অবস্থা।
সকালের নাস্তার জন্য যে জায়গায় থেমেছিলাম সেখানে খাবারের অবস্থা এত নাজুক কি আর বলব। ভুনা মাংশ থেকে মাছের গন্ধ আসছিল। আমার থিওরি হল গরুকে আগে মাছ খাওয়ানো হয়েছে তারপর কুরবানী করে রান্না করা হয়েছে। আর নান রুটি লবন পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া।
বাঁশপাতা রেস্টুরেন্ট এর রিভিউ ভালো, দেখা যাক। ভাত, মাছ, মুরগি অর্ডার করেছি। সোজা খাবার খেলেই বোঝা যাবে রাধুনীর হাত কেমন।
আপনি যদি প্যালেসে থাকেন আর কম টাকায় খেতে চান তবে বাঁশপাতার থেকে ভালো রেস্টুরেন্ট এখানে নেই।
বাঁশপাতার খাবার মোটামুটি মানের। সিগনেচার টেস্ট তো নেই-ই …বেশি ঝাল দেয়া ডাল আর তরকারি খেতে অদ্ভুত লেগেছে।
শুটকি ভর্তার নামে শুটকির ব্লেন্ড খাওয়ানোর অপচেষ্টা আর মুরগির নামে দুর্বল তরকারি। সব কিছুর পরেও প্যালেসের থেকে এ জায়গাটা সস্তা।
|| তিন ||
প্যালেস একটা বিশাল বড় জায়গা। অনেক প্লান করে সাজানো গোছানো। শুধু ছবি দেখলে বুঝতেই পারবেন না এদের ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার কি অসাধারন কাজ করেছে।
পুটিজুরি আসার পরে… হাইওয়ে থেকে আরো মিনিট দশেক এর ড্রাইভ করে তারপর যেতে হয় প্যালেসের প্রধান ফটকে।
এর আগেও আমি বেশ কয়েকটি রিসোর্টে গিয়েছি, কিন্তু এখানকার মত টাইট সিকিউরিটি দেখিনি।
আমাদের মত ছা-পোষা মানুষের কাছে প্যালেস এর মত রিসোর্টে আসাটা একটা বিলাসিতা। এখানকার একরাতের ভাড়া দিয়ে আপনি ঢাকা শহরে এক মাস বাসা ভাড়া দিতে পারবেন!
আমরা বেশ অনেকজন একসাথে আসায় যাতায়াত এবং খাবারের খরচ বেশ কম পড়েছে।
প্যালেস নিয়ে রিভিউ দেয়াটা একটা বোকামি। এই রিসোর্ট যেমন ব্যায়বহুল, তেমনি তাদের সার্ভিস এবং সাজানো গোছানো পরিবেশ। কোনভাবেই আপনি বিরক্ত হতে পারবেন না।
রুমে চেক-ইন করেই আমরা সুইমিং পুলের দিকে রওনা দিয়েছে বাচ্চা-কাচ্চা সহ। খাবার ঝামেলা বাঁশপাতা থেকেই সেরে এসেছি।
প্যালেসের টাওয়ার বিল্ডিং এর সামনে থেকে বাগিতে এরা আপনাকে সুইমিংপুলে নিয়ে যাবে। এই বাগিগুলো ছোট গলফ কার্টের মত। রিসোর্টের যেখানেই যেতে চান আপনাকে নিয়ে যাবে। অবশ্যই ফ্রি-অব-কস্ট। ঐ যে বললাম সার্ভিস নিয়ে আপনি কখনো বিরক্ত হবেন না।
|| চার ||
প্রচন্ড গরমে সুইমিং পুলে ঝাপাঝাপির থেকে আনন্দময় মনে হয় আর কিছুই হতে পারে না। ছোট বাচ্চাদের জন্য শ্যালো টাব আর বড়দের জন্য পুল, সেই সাথে জাকুজি – মন ভালো করে দেয়ার মত সেটাপ। ড্রেসিং রুম, টাওয়াল, সোপ কোন খানেই খুঁত নেই।
ওই যে প্রথমে মনে হবে রিসোর্ট এক্সপেন্সিভ কিন্তু যখন এর সাথের সার্ভিস গুলোর কথা আপনি চিন্তা করবেন তখন দেখবেন আসলে সব কিছু মিলিয়েই এরা প্রাইসিং করেছে। পরিবার নিয়ে আমোদে দু-একটা দিন কাটানোর জন্য মন্দ নয়।
শব্দের থেকে ছবি বেশি কথা বলে তাই ছবিতেই দেখুন। আমার কন্যা বেশ খুশি এরকম সুইমিংপুলে আসতে পেরে। তার ভাষায় অবশ্য এটা সুইমিং কুল!
যেই তিন দিন আমরা প্যালেসে ছিলাম রোজ নিয়ম করে সুইমিং পুলে গিয়ে খেলা ধুলা করতাম। 🙂 এর থেকে মজা বোধহয় আর কিছুতেই হয় না। বাচ্চাদের জন্য আলাদা একটা প্লে-জোন আছে পানি সহ, সেখানে আবার পাঁচশত টাকা পে করতে হয়। তার থেকে এই সুইমিং পুলই অনেক বেটার, ফ্রি এবং আনলিমিটেড টাইম।
এই ওয়াটার জোন বাদেও বাচ্চাদের খেলার জন্য আরো ২ টা প্লে-জোন আছে প্যালেসে। একটা ইনডোর আরেকটা আউটডোর। ব্যবস্থা বেশ চমৎকার। কোনভাবেই আপনার বাচ্চা-কাচ্চা বোর হবে না। বিশাল খোলা জায়গায় ঘুরবে অথবা খেলবে।
।। পাঁচ ।।
প্যালেসের খাবার দাবার নিয়ে একটু কথা না বললেই নয়। এদের রেভোলিউশন রেস্টুরেন্ট আমাদের ৮ জনের এক বেলার খাবার বিল ছিল ১০ হাজার টাকা। একটা স্টেইকের দাম প্রায় ১৬০০ টাকার মত পড়ে ঃ)। একটা বার্গারের দাম প্রায় ৮০০++ মানে সার্ভিস চার্জ আর ভ্যাট আলাদা।
কিন্তু যদি কোয়ালিটির কথা বলতে হয় তবে অবশ্যই এ গ্রেড দিতে হবে। খাবারে মান এবং স্বাদ নিয়ে কোন আপত্তি আমার ছিল না।
সকাল বেলা বুফেতে যে খাবার ছিল তা অনেকটা ফাইভ স্টার ক্যাটাগরির। এইখানেও পেট পুজো করতে কোন সমস্যা হয়নি।
খাবারের দাম নিয়ে এত আলোচনা না করে এদের মেন্যুবুকটা একটু দেখে নিন
তুলনামুলক বিচারে এখানে খাবারের দাম অনেক বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু খাবারের টেস্ট নিয়ে আপনার কোন আপত্তি থাকার কথা না।
তবে একটা বিষয় খুব অবাক লেগেছে সেটা হোল এরা একবোতল ৫০০ মিলি MUM পানি আমার কাছে ৩৮ টাকা রেখেছে, যার বাইরে দাম মাত্র ১৫ টাকা!
প্যালেস নিয়ে অনেক প্যাঁচানো হয়ে গেল। এদের সার্ভিস বেশ ভালো মানের… এত কথার মূল কথা সেটাই। ধন্যবাদ প্রাপ্য আমাদের আবু রায়হান দোয়েল এবং জান্নাতুল ফেরদৌসের, গাড়ি এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য।
আসুন আরো কিছু ছবি দেখি, শব্দের থেকে ছবি বেশি বলতে পারে –
0 Comments