জন্মদিন জিনিসটা আমার কাছে একটু অদ্ভুত, বিশেষ করে নিজের জন্মদিনটা। অনেক অনেক স্মৃতি জমে থাকে মানুষের জন্মদিন নিয়ে আমার কিন্তু সেরকম সুখকর কোন স্মৃতি নেই। জন্মদিন নিয়ে এর আগে আমি কিছু লিখি-ও-নি। কেমন যেন একটা অসস্তি কাজ করে আমার মাঝে। মধ্যবিত্তের টানাপোড়নে বড় হয়ে ওঠা কিশোর কোনদিন জন্মদিনের কেক কিনে সেটা কেটে আনন্দ করার সুযোগ পায়নি। তাই আমার উতসাহ কম, সব কিছুতেই কম। উৎসবও কম, উল্লাস কম, তার প্রকাশও কম।
কিন্তু আমার কন্যা আমার মত অর্থনৈতিক মন্দায় বড় হয়নি। সে অনেক বড় একটা পরিবার পেয়েছে জন্মের পর থেকেই। অনেক কেক, গিফট আর আদর দেখেছে। প্রিভিলেইজড চাইল্ড হিসেবে তাই তার মনে হয় জন্মদিন মানেই বিশাল কোন বিষয়, উৎসব, আনন্দের দিন। ধন্যবাদ তোকে মা। নিজের হারিয়ে ফেলে শৈশবের আনন্দের কিছূটা তোর মাঝে দেখতে পেয়ে। অনেকটা পোলাওয়ের গন্ধে পেট ভরানোর মত।
নিজের হাতে লিখে দেওয়া বাবাকে একটা উইশ এটাও আমার মনে থাকবে।
আমার স্ত্রী একটা কেক নিয়ে এসেছিল। আমি সেটা দেখিনি, কিন্তু আমার কন্যার উৎসাহের আতিশায্যে ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলাম কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জন্মদিনের আগেই, মানে রাত বারোটা বাজার আগেই কেক কাটতে হল মেয়ের তাড়নায়। কারন আলিনার মনে হয়, জন্মদিন যারই হোক, কেক সবসময়ই তার। তাই সে যখন কেক খেতে চাইবে তখনি কাটতে হবে।
বাবাকে গিফট হিসেবে একটা মার্বেল আর ব্যাটারি দিয়েছিল, সাথে একটা প্লাস্টিকের ললিপপ। বিনিময়ে পরদিন খেলনার জায়গায় (Play Zone) যাবার কথা আদায় করে নিয়েছে আমার কাছে :)। নিরানন্দ এই আমি সবটাতেই রাজি :)।
জন্মদিনে আমি সবসময় গিফট পেয়ে থাকি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে। জন্মদিন বলতে এটাই আমার পাওনা থাকে। পৃথিবীর আর সবাই ভুলে গেলেও সে ভোলে না। তোমাকে কখনো ধন্যবাদ দেয়া হয় না। পাওনাই থাক। কাছের মানুষকে আমরা ধন্যবাদ আর দুঃখিত এই দুটো শব্দ খুব কম বলি। আমাদের কোথায় যেন বাধে! ভেবে নেই মনের কথা বুঝে নেবার অলৌকিক একটা সামর্থ্য আপনজনেরা রাখে, নাহলে কিসের আপন!
আমার নির্লিপ্ত চাহনি দেখে কন্যা যখন জিজ্ঞেস করে, “বাবা তুমি গিফট আর কেক দেখে সারপ্রাইজড হওনি?” তখন আমি বলি, “বাবা খুশি হয়েছি, কিন্তু বিস্মিত হওয়া আর ভয় পাওয়ার ক্ষমতা বাবার কমে গিয়েছে। বয়স হয়েছেতো তাই।” কে জানে অত জটিল কথা তার শিশুমনে ধরবে নাকি! যেদিন বুঝতে শিখবে তখন বাবা বলে কেউ একই পথে তার সাথে আর নাও হাটতে পারে।
আমাদের সবার পথগুলোই আলাদা হয়। সবার গল্পগুলোও আলাদা। শুধু ক্ষনিকের মায়ায় আমরা কাছে আসি একসাথে ঘর বাঁধি। তারপর আবার যে যার পথে। এই এত কিছুর ডামাডোলে আমরা বাঁচাটা যেন না ভুলে যাই। বেঁচে থাকার প্রতিটা মূহুর্ত যেন উপভোগ করতে পারি।
আমরা কিন্তু ঠিকই একোটা প্লে-জোনে গিয়েছিলাম। কিন্ত সেখানে আর কোন বাচ্চাকাচ্চা না থাকায় আলিনার বোরিং সময় যায়। খাবার অবশ্য মন্দ ছিল না। যদিও আমার সহধর্মীনির এই সব কোরিয়ান অখাদ্য খেতে ভালো লাগে নি, কিন্তু আমি বরাবরই খাবার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসি।
এইরকম মাংসের ঝোলের মত করে রান্না করা নুডলস আর কাঁকড়া একবাটি খেলে ২ বেলা ভাত না খেলেও চলে।
ফেইসবুকে নিজের জন্মদিন হাইড করে রাখা। সারাবছর যারা কোন খবর রাখে না তারাও যখন ইনবক্সে বার্থডে উইশ করে নিজেকে কেমন যেন অপ্রস্তুত লাগে। তাই এমনকি ছবিও শেয়ার করি না। আমার দৃষ্টিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বেশি সোশ্যাল হতে গেলেই বিপত্তি। একটা মিথ্যে অহংকার আর ইগোর মায়াজালে এই সকল মাধ্যমগুলো আমাদের ভেতরের পশুটাকে বাইরে বের করে আনে। কেউবা আবার বক ধার্মিক সাজে। কি দরকার অত হ্যাপার?
এই ভালো লাগা নিয়েই বেঁচে থাকা যে প্রিয় কিছু মানুষ মনে রেখেছে এই অভাজনের জন্মদিন। যারাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ।
0 Comments