ঢাকা থেকে কাশ্মীর

May 13, 2022ভ্রমন0 comments

কাশ্মীর – নাম শুনলেই আমাদের মনে অনেক রকম বিতর্কিত চিন্তাভাবনা উঠে আসে। কাশ্মীরকে তিনটুকরো করে তিনদেশ দাবি করে বসে আছে। অর্ধেক অংশ ভারতের দখলে সেটা জম্মু-কাশ্মীর, সাথে লাদাখও আছে। পাকিস্তানের অংশ আজাদ কাশ্মীর আর গিলগিট-বালতিস্তান নামে পরিচিত। চায়নার সাথে এখানে লাদাখ অংশে ভারতীয়দের সীমানা নিয়ে একটা বিরোধ আছে। একটু গুগল করলেই আপনি এই অঞ্চলের জিও-পলিটিক্সের জটিল মানচিত্র খুঁজে পাবেন।

ভারত তাদের নিয়ন্ত্রনের জায়গাটুকুকে ইউনিয়ন স্টেট হিসেবে পরিচালনা করে আসছে। অন্যান্য প্রদেশের মত এদের নিজেদের সরকার নেই। ফেডারেল সরকারই সব দেখাশোনা করে। আপনি যদি ভারতের অন্যান্য জায়গায় ইতিমধ্যে গিয়ে থাকেন তবে কাশ্মীরে পা ফেলার সাথে সাথেই আপনি তফাৎ বুঝে যাবেন।

সে যাই হোক, এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে এবং হবে। আমার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষন নয়। সদ্য কাশ্মীর থেকে ঘুরে আসলাম, তাই এই তাজা অভিজ্ঞতায় জং ধরার আগেই কিছু পয়েন্ট টুকে রাখতে চাই।

কাশ্মীর সুন্দর, আপনার কল্পনার থেকেও সুন্দর। এ বিষয়ে দ্বিমত নাই। ক্যামেরার চোখে কিছুটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এ এমন এক ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেটা চোখে না দেখলে পুরোপুরি স্বাদ নেয়া যায় না। যতই সাদা সাদা বরফাবৃত পাহাড় দেখি না কেন দূর থেকে, গালে লাগা ঐ ঠান্ডা বাতাস,পায়ের নীচের পাথুরে জমিন, চোখের সীমানায় পাইনের সারি সারি বন আর হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পাহাড়ের চুড়ো আপনাকে মাতাল করে দেবেই।

কাশ্মীরের সৌন্দর্যকে ভয়ংকর বলা চলে। এর আবহাওয়ার কোন মতিগতি নেই। এই ভালো তো এই খারাপ। সবসময় তৈরি হয়ে থাকতে হয় চমকের জন্য।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 1
অনেক আনন্দ নিয়ে শুরু করা আলিনার এই কাশ্মীর যাত্রা শেষ পর্যন্ত ক্লান্তিতে রপান্তরিত হয়েছে।

এয়ারপোর্ট, লে ওভার এবং সিম বিড়ম্বনা

যাবার সময় আমাদের শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে এমেক্সের লাউঞ্জে বেশ ভরপেট খেয়ে গিয়েছি। এই লাউঞ্জ ফ্যসিলিটিগুলো না থাকলে অনেকের আনন্দ ভ্রমনের প্রথমেই ক্লান্তি ভর করে আসত।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 2
সিটি ব্যাংক এমেক্স লাউঞ্জে আমি

লাউঞ্জের কথা বললাম কারন আমাদের ফ্লাইট সরাসরি ঢাকা থেকে কাশ্মীরের ছিল না। আমরা ঢাকা থেকে কলকাতায় যাই, সেখানে প্রায় ৫ ঘন্টা বিরতি দিয়ে লোকাল ফ্লাইটে কলকাতা থেকে দিল্লী। সেখানে প্রায় ৭ ঘন্টার যাত্রা বিরতি এবং এরপর আরেক ফ্লাইটে দিল্লী থেকে শ্রীনগর রওনা দেই। সাথে বাচ্চা-কাচ্চা থাকায় এই ৭ ঘন্টা সময় কাটানোর জন্য আমাদের আদর্শ জায়গা ছিল দিল্লীতে লাউঞ্জকী (LoungeKey) ব্যবহার করে লাউঞ্জে থাকা। সময়টা রাত হওয়ায় আমাদের জন্য কিছুটা সুবিধাই হয়ে যায়। লাউঞ্জে খাওয়া দাওয়া সবকিছুই ফ্রিতে :)।

কাশ্মীরে যেতে হলে আপনাকে এভাবেই ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হবে। সরাসরি শ্রীনগরের ফ্লাইট নেই ঢাকা থেকে। আমাদের ট্যুর কোম্পানি আগে থেকেই আমাদের জন্য গাড়ি ঠিক করে রেখেছিল। এই প্রথমবারের মত আমি কোন ট্যুর কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে ট্রাভেল করছিলাম। সাধারনত আমি একাই সব জায়গায় যাই। তবে কাশ্মীর পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হওয়ায় আর নিজের ব্যস্ততার কারনে এবং সাথে বারো জনের গ্রুপ থাকার কারনে নিজে এসকল ঝামেলায় যেতে চাইনি।

আদতে, কাশ্মীর ঘুরতে গেলে আপনার কোন ট্রাভেল এজেন্ট বা ট্যুর গাইডের প্রয়োজন নেই। অযথাই আপনার সময় এবং টাকার অপচয়ের অন্যতম একটা কারন এরা।

হোটেল গ্রীন একর (Green Acre)

আমাদের ট্রাভেল অর্গানাইজারের ব্যার্থতার কারনে বেশ কয়েকটি হোটেলে আমাদের থাকতে হয়েছে। তার মধ্যে হোটেল গ্রীন একর সেরা। এদের খাবার দাবার এবং কর্মচারীদের ব্যবহারও বেশ অমায়িক। সামনে সুন্দর একটা ফুলের বাগান আছে। অনায়াসে সেখানে বসেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়া যায়। অনেকটা বনেদি আমলের জমিদার বাড়ির মত।

কাশ্মীরে খুব উঁচু উঁচু বিল্ডিং করে তাতে হোটেল বানানো হয়না। সব বাড়িঘরই মোটামুটি দুই থেকে তিন তলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যা বুঝতে পারলাম এখানে লিফট নেই কোন জায়গায়। অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যাবে বিল্ডিং এ লিফট লাগালে, তাই অল্পতেই সীমাবদ্ধ থাকে এদের বিল্ডিং এর উচ্চতা।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 3
হোটেল গ্রিন একর

আমাদের যাত্রার শেষের দিকে আমরা এই হোটেল থেকে গিয়ে অন্য হোটেলে ছিলাম যার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি।

আমাদের সাথে থাকা ড্রাইভার দুজনও সময়মত হাজির হোত না, ফলে আমাদের বেশ অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে এই ট্যুরে।

শ্রীনগরে মোবাইল সিম পাওয়াটাও একটা কষ্টের বিষয়। এখানে ভারতীয় সরকারের রেস্ট্রিকশনের কারনে সারা ভারতে যে মোবাইল সিম চলে সেটা এখানে চলে না। কাশ্মীর থেকে বের হলেই আবার এখানকার সিম অচল হয়ে যায়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সময় আর টাকা নষ্ট করে আমরা সিম নিতে পেরেছিলাম। অথচ এই একই কাজ করতে দিল্লী বা কলকাতায় সর্বোচ্চ তিরিশ মিনিট সময় লাগে।

কাশ্মীরে আমাদের প্রথম দিন চলে যায় এসকল জিনিস ম্যানেজ করতে করতেই। রাস্তাঘাট দেখেছি, এখানকার সাধারনভাবে চলাফেরা করে মানুষ দেখেছি, বেশ ভালো লেগেছে এখানে নারীদেরও সমান তালে গাড়ী চালাতে দেখে। তাদের মার্জিত ভাব আছে, আমাদের দেশের মত অযথা বিরাট আলখেল্লা আর কালো মোজায় নিজেদের বন্দী রাখে না। কিন্তু কাশ্মীরের আবহাওয়া আমার পছন্দ হয়নি। মে-জুন মাসে এখানে প্রচন্ড গরম থাকে। রোদে গেলেই হাত-পা পুড়ে যাবার মত অবস্থা হয়। আবার একটু ছায়ায় আসলেই ঠান্ডা লাগে। জ্যাকেট পরবেন নাকি পরবেন না এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই বেলা গড়িয়ে ঠান্ডা নেমে যায়। রাতের বেলা আবার রুম হিটার লাগে! সে এক অন্যরকম আবহাওয়া।

টিউলিপের বাগানে টিউলিপ নাই!

প্রথমদিন পৌছেই আমরা গিয়েছিলাম ইন্দিরাগান্ধি মেমোরিয়াল গার্ডেনে। পড়ন্ত বিকেল তখন। ছবি তোলার মত আলো না থাকলেও যথেষ্ট আলো ছিল উপভোগ করার মত। বেশ সাজানো গোছানো বাগান। টিউলিপ দেখতে হলে এখানে সিজনে আসতে হবে। এর সাথেই অসাধারন একটা লেক রয়েছে, কৃত্তিম ফোয়ারা রয়েছে, আর ফুটপাথ জুড়ে রয়েছে নাম না জানা অসংখ্য ফুলের মেলা।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 4

এরকমটা অবশ্য পুর কাশ্মীর জুড়েই আপনি দেখতে পাবেন। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় আর দেয়ালে গোলাপের ঝাড়। লাল টকটকে গোলাপ দিয়ে নিজেদের ঘিরে রেখেছে কাশ্মীরবাসী।

ডাল লেক

শ্রীনগরের সবকিছুতেই কেন জানি ডাল লেকের কথা মনে পড়ে যায়। যতবার এর পাশ দিয়ে গেছি মনটা ভালো হয়ে গেছে। অনেক প্রশস্ত রাস্তা, চোখ জুড়ানো জলরাশি আর নিয়ম মেনে চলা গাড়ি মূহুর্তেই মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের রাস্তায় গাড়ি অসভ্যের মত চলে। আমাদের যেকোন লেকের নোংরা পানি আর রাস্তা ঘাটের ময়লা আবর্জনা থেকে শ্রীনগর বেশ পরিচ্ছন্ন আর গোছানো। এমনকি দিল্লী আর কলকাতা থেকেও এর পাহাড়ী আঁকাবাকা রাস্তার মুগ্ধতা বেশি।

[এতক্ষনেও যদি আপনি আমার লেখা পড়তে থাকেন তবে জেনে রাখুন আমি ছবি তোলার থেকে ভিডিও করেছিলাম বেশি আর নিজের চোখে দেখতে চেয়েছি কাশ্মীরের সৌন্দর্য। কোনভাবেই এটাকে ট্রাভেল ভ্লগিং বলা যাবে না। বরঞ্চ কাস্মীরের রাস্তাঘাট দেখতে পাবেন বেশি।]

দুধ পাত্রির ঘোড়ার সফর

সবচেয়ে বেশি হাইপ তোলা টুরিস্ট স্পট হচ্ছে এই দুধপাত্রি (Doodhpathri) নামক জায়গা। পরদিন গাড়িযোগে আমরা সপরিবারে সেখানে রওয়ানা দিয়েছি। পথেই অসাধারন পাহাড় আর সবুজ দেখতে দেখতে যাচ্ছি, আমাদের ড্রাইভার ভ্যালির প্রবেশ মুখে জানালো এখানে কাশ্মীরের বিখ্যাত কাওয়া চা, মাক্কি রোটি আর নুন চা পাওয়া যায়। তার প্রশংসার পরিমান এতই বেশি ছিল যে আমরা শেষ পর্যন্ত ফেরার পথে সেই অখাদ্য চেখে দেখতে রাজি হই।

এদের রুটির দামও বেশি চায়, মুলোমুলি না করে নিলে ধরা খাবার প্রবল সম্ভাবনা আছে। যতই মুখে এরা মুসলিম মুসলিম ভাই বলুক না কেন স্ক্যামিং এ কাশ্মীরের লোকাল সেলাররা সেয়ানা। পারতপক্ষে এদের এই অখাদ্য এড়িয়ে চলবেন।

তবে ভ্যালিটা অসাধারন সুন্দর। ড্রাইভার আমাদের নিয়ে নামিয়ে দেয় ঘোড়ার স্ট্যান্ডের সামনে। এখান থেকে হাঁটা পথেও সেই পাথুরে নদীর কাছে যাওয়া যায়, কিন্তু এরা এমনভাবে আপনাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে যেন আপনি বাধ্য হন ঘোড়া নিতে। অথচ ভ্যালিতে হাটা পথের বেশ ভালো রাস্তা রয়েছে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 5

পুরো কাশ্মীরের ট্যুরিস্ট ব্যবসা চলে এই রকম স্ক্যামিং এর উপর। অসাধারন সুন্দর মন কেড়ে নেয়া ভ্যালি অথচ এদের টুরিস্টদের পকেট কাটার ব্যবস্থা দেখে খারাপ লাগে। এরা সবাই ইউনিয়ন করে চলে এবং ট্যুরিস্টদের একজন আরেকজনের হাতে ট্রান্সফার করে ঃ)।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 6
অনেক পথ ঘোড়ায় পাড়ি দিয়ে এখানে আহামরি কিছুই দেখার নাই।

পরিমহলের রাস্তায়

পরিমহল নামে আরেকটা ট্যুরিস্ট স্পট আছে। ডাল লেকের রাস্তা ধরে যেতে হয়। যাবার পথে একজায়গায় গাড়ি থেকে নেমে সব ব্যাগ ব্যাগেজ স্ক্যানিং করাতে হয়। ভাবখানা এমন যেন কোন দূর্গে বা এয়ারপোর্টে ঢুকছি। এখানে সকাল সকাল যেতে না পারলে ঝামেলা। লম্বা জ্যাম লেগে যায় ফেরার সময়। চলাচলের এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা অনেক অপ্রতুল।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 7

পরিমহল আমাদের লালবাগ কেল্লার মতই। আরেকটু বেশি সুন্দর করে সাজানো আর কয়েক স্তরে বাগান। শ্রীনগরে দর্শনীয় স্থান বলতে বেশিরভাগই আসলে মুঘল আমলে গড়ে ওঠা দূর্গ আর বাগান। তবে এত নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে পাহাড়ের উপর দূর্গ দেখার কোন স্বাদ না থাকলে বাদ দেবেন। এখান থেকে শহরে বেশ বড় একটা অংশের ভিউ পাবেন সাথে পাবেন ডাল লেকের একটা অংশ। সাথে ছাতা নিতে ভুলবেন না, তীব্র রোদ।

শালিমার

শালিমারের অসাধারন সৌন্দর্য যেন জান্নাতের একটুকরো বাগান। পুরো শ্রীনগর জুড়ে এত এত ফুলের গাছ আর বাগান রয়েছে তারপরেও শালিমার এর বিশালত্ব নিয়ে আলাদা হয়ে থাকবে মনে। স্থানীয় লোকজন এটাকে ছুটির দিনে পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করে। বাগানের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে লম্বা একটা সময় লাগবে আপনার। তাই উচিত হবে খাবার দাবার নিয়ে ভেতরে ঢোকা। ঘাসের বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে উপভোগ করতে পারেন কাশ্মীরি বাতাসের সুবাস।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 8

কিছু কেনাকাটার থাকলে শালিমারের বাইরের মার্কেট থেকে কিনতে পারবেন। ভেতরে খাবার দাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। আগে থেকেই খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকতেও কোন মানা নেই। অনেক কাশ্মীরীকেই দেখলাম বাসা থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে এসেছে। চাদর বিছিয়ে সবাই মিলে বসে খাবার আয়োজন চলছে।

শালিমারের বুক চিরে যে পানি বয়ে চলেছে তা মূলত একটা পাহাড়ি ঝর্নাকে রুপান্তর করা। পানি কিছুটা নোংরা। স্থানীয় বাচ্চাদের একটা দল দেদারসে সেই টাকনু সমান পানিতে খেলছে আর ভিজছে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 9

হযরতবাল এবং ডাল লেকের পাশে ডুবন্ত বিকেল

পড়ন্ত বিকেলের দিকে শালিমারের থেকে আমরা গিয়েছিলাম হযরতবাল মসজিদ (Hazratbal Masjid) দেখতে। এটাকে অনেকে দরগা শরীফ বলেও চেনে। মূলত জনশ্রুতি আছে আমাদের নবীর একটু চুল এখানে সংরক্ষিত আছে, সেই জন্যেই এই নামকরন।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 10
হযরত বালের পাশে ডাল লেকের একাংশ

মূঘল আমলের এই মসজিদের স্থাপত্য এমনিতেই আপনার মন কেড়ে নেবে। তার উপর ডাল লেকের পাশে হওয়াতে এর সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। এর বিশালত্ব, পেছনের ইতিহাস আর ডাল লেকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ মূহুর্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে ১৭০০ সালে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 11
শিকারার সামনে আমরা

হযরতবালে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এখানে ট্যুরিস্টদের কাছে উচ্চমূল্যে আতর, টুপি এসব বিক্রির চেষ্টা করে স্থানীয় বিক্রেতারা।

কাশ্মীরে নৌকাকে “শিকারা” বলে। ডাল লেকের এদিকটা বেশ পরিষ্কার। দরদাম করে শিকারায় উঠে কিছুটা সময় ঘুরে আসতে পারেন পানি থেকে, মন্দ লাগবে না।

কাশ্মীরে, শ্রীনগরের আর সব জায়গার সাথে তুলনা করলে আমার কাছে মনে হয়েছে হযরতবালই সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।

পেহেলগামের পথে

শ্রীনগর থেকে পেহেলগামের দিকে আমরা যখন রওনা দেই তখন বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। সকাল সকাল চলে যাবার কথা থাকলেও আমাদের ড্রাইভার তার গাড়ির সমস্যার কারনে আসতে পারেনি। যেতে অবশ্য বেশি সময় লাগে না, সাড়ে তিন ঘন্টার মত। তবে এদের এই দেরি করার পেছনে মূল কারন হচ্ছে আমাদের দেরি করিয়ে দেয়া। যেন পেহেলগামে পৌঁছে আমরা তাদেরকে আবার অন্য কোথাও নিয়ে যেতে না পারি!

আমার কাছে ভারত মানেই রোড ট্রিপ। এখানে মূলত গন্তব্যে গিয়ে পুলকিত হবার থেকে রাস্তার দু-ধারের সৌন্দর্যই উপভোগ করতে হয়। যতবার চোখ চলে যাচ্ছিল সাদা বরফে আবৃত পর্বত মালার দিকে, মনটা নিজের অজান্তেই শান্ত হয়ে যাচ্ছিল। আর চোখ খুললেই সাদা স্নিগ্ধতার পাহাড়ী পরিবেশ আপনাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে।

সোলো ট্রাভেলের জন্য কাশ্মীরে আসলে শ্রীনগরে না থেকে সরাসরি পেহেলগামে বা গুলমার্গে চলে আসটা ভালো, আর যাবার সময় শ্রীনগরে থেকে আশেপাশে ঘোরা বুদ্ধিমানের কাজ।

পেহেলগামে যাবার পথে বেশ ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে খাবারের জন্য। ড্রাইভাররা আপনাকে তাদের পছন্দমত জায়গায় নিয়ে যেতে চাইবে কারন সেখানে গেলে তাদের কমিশন আছে। মূলত পুরোটা সময় আমরা কাশ্মীরে এটাই দেখেছি। আমাদের ড্রাইভার দুজন তাদের পছন্দের দোকান এবং রেস্টুরেন্টে আমাদের নিয়ে যায়, কারন এদের সাথে ২০% কমিশনের একটা রফা করা আছে।

এদের খাবারদাবার আমার কাছে খুব একটা সুবিধার মনে না হলেও বিরিয়ানিটা কিন্তু বেশ মজার বানায়।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 12

কাশ্মীরের সব জায়গায় আপনি একই স্বাদের খাবার পাবেন না। বিশেষ করে শ্রীনগরের খাবারের সাথে অন্য অংশের প্রচুর তফাৎ আছে। বেশিরভাগই বাসমতি চাল ব্যবহার করলেও কিছুটা শক্ত থেকে যায়। আর ভেজিটেবল দিয়ে বিরিয়ানি কিভাবে হয় সেটা পুরান ঢাকায় বড় হয়ে ওঠা এই আমি আজও বুঝতে পারিনি।

আরু ভ্যালি, বৃষ্টি এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য

পেহেলগামে আমরা গিয়েই মুগ্ধ হয়ে যাই এর রাস্তার পাশে দিয়ে ছুটে চলা লিডার নদী দেখে। অকারনে মনে পড়ে যায় দুধপাত্রির স্ক্যামিংয়ের কথা। লিডার নদী রাস্তার পাশ দিয়ে সগর্জনে ছুটে চলেছে এবং আমরা যে হোটেলে ছিলাম তার উঠানে বের হলেই এই নদী দেখা যায়। এর সৌন্দর্যের কাছে দুধপাত্রির সেই মরা নদী তুচ্ছ।

সদ্য বৃষ্টিস্নাত নদীর পাড়ে বসে থাকতে পারবেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এখানকার তাপমাত্রা অত্যন্ত সুন্দর, ১২-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মাঝে ছিল, আর অপার্থিব এক আলো খেলছিল সারা আকাশ জুড়ে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 13
লিডার নদীর পাশে

আমরা হোটেলে পৌছেই আর দেরি করিনি, চলে গিয়েছিলাম কাছের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে, এবারের গন্তব্য আরু ভ্যালি। বৃষ্টি ভালো লাগলে আপনার জন্য এই সময়টা সোনায় সোহাগা। পুরো কাশ্মীর জুড়েই ভ্যালির ছড়াছড়ি, সেখানে পৌঁছে চা আর নুডলস খাওয়া বাদে বিশেষ কিছুই দেখার নেই। কিছু টুকটাক শপিংও চাইলে করতে পারেন। তবে সেরা অনুভুতি হচ্ছে আট হাজার ফিট উচ্চতার বৃষ্টিস্নাত পাহাড়ী রাস্তায় বৃষ্টি ছুঁয়ে ছুটে চলা।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 14

বৃষ্টির জন্য আরু ভ্যালিতে আমাদের দেখার জন্য কিছুই ছিল না। এটা আসলে দর্শনীয় কোন জায়গাও নয়, অন্তত আমার কাছে মনে হয়নি। কাশ্মীর জুড়ে এরকম নানা ভ্যালির নাম দেয়া আছে, সেগুলো মূলত পাহাড়ের মাঝখানে পার্কের মত এক একটা খোলা জায়গা। সবখানেই কিছু দোকানপাট থাকে শপিং করার জন্য আর কিছু খাবারের দোকান।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 15
আরু ভ্যালি, পেহেলগাম – কাশ্মীর

বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট স্পট আপনাকে হতাশ করবে যদি আপনি বিস্ময়কর কিছু দেখতে পাহাড়ে যান। পাহাড় নিজে থেকেই দেখতে সুন্দর, কিন্তু এখানে জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন আর মন্থর।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 16
আরু ভ্যালি

বেতাব ভ্যালিও মোটামুটিভাবে দেখতে একইরকম। তবে এখানে ঢুকতে আপনাকে ১০০ রুপি মাথাপিছু টিকিট কাটতে হবে। ভেতরে খাবারের দোকান আর কাশ্মীরী পোষাকে ছবি তুলে দেবার জন্য লোক আছে। বিশেষ আকর্ষন বলতে ভ্যালির খোলা ময়দানে ঘাসে শুয়ে বসে থাকতে পারেন।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 17
বেতাব ভ্যালি

ক্যামেরার চোখে ঠিক সৌন্দর্যটা ধরা পড়েনা। আপনাকে কাশ্মীরের সৌন্দর্য দেখতে হলে নিজে যেতে হবে।

সিনথান টপ এর বরফ!!!

বরফ দেখার খুব শখ ছিল আমাদের একদলের। কিন্তু এই সিজনে সব জায়গায় বরফ পাওয়া যায়না। সেজন্য আমরা গিয়েছিলাম সাড়ে চৌদ্দহাজার ফিট উচ্চতার সিন্থান টপে। এখানকার রাস্তা অত্যন্ত বিপদজনক। দক্ষ ড্রাইভার না হলে মৃত্যু সুনিশ্চিত। তবে যাত্রা পথের যে ভয়ংকর সুন্দর আপনি দেখবেন তার কাছে এ কিছুই নয়। বিশাল পাইনের বনের মাঝখান দিয়ে সাপের মত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে আপনি উপরে উঠছেন, হাঁড় কাপিয়ে দেয়ার মত ঠান্ডা, পায়ের নীচে গ্লেসিয়ার আর বরফগলা নদী, সে সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মত থাকে না। এটা অনুভব করতে হয়।

সিনথান টপে পৌঁছে বেশিক্ষন আমরা গাড়ির বাইরে থাকতে পারিনি। অত্যন্ত ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল, টেকা মুশকিল। আমার আগের মানালির বরফের অভিজ্ঞতাকে থোড়াই কেয়ার করে আমাকে ফেরত পাঠিয়েছে গাড়ির আরামদায়ক উষ্ণতায়। যারা এখানে এসেছে- ড্রাইভার, পোষাক ভাড়া দেয়ার লোক এবং চা, নুডলস বিক্রেতা, তারাও পারতপক্ষে তাবু বা গাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না।

আমি বরফের মাঝে এইরকম ঝড়ো বাতাসে আর কোনোদিন পড়িনি। মনে হচ্ছিল হাঁড়ের ভেতরে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা। মুখ খুললেই গলার ভেতর পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 18

সোনামার্গ এর সৌন্দর্য এবং আমাদের উচ্চতা বিড়ম্বনা

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 19
সোনামার্গ ভ্যালি

সোনমার্গ বা সোনামার্গ যাই বলেন না কেন, জায়গাটা দেখতে একদম হলিউডের ওয়েস্টার্ন ছবির মত। একটা টিলার উপর দাঁড়িয়ে যখন আশেপাশে দেখছিলাম বেশ মনে হচ্ছিল এখানে একটা হলিউডি শুটিং হলে অসাধারন হয়। এই জায়গাটাও আর দশটা ভ্যালির মত। বিশেষ আকর্ষন বলতে লাদাখ যাবার আগে এখানে বেইজক্যাম্প করে ট্রাভেলাররা।

সিল্করোড হিসেবে বিখ্যাত এই জায়গা সামরিক কারনে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে। এই রোড কাশ্মীরের সাথে চায়নার সংযোগ করেছে। এই কারনেই এখানে বেশ বড়সড় একটা আর্মি ক্যাম্প রয়েছে।

আমরা যখন যাই তখন অনেক বড় বড় ট্রাকে করে আর্মির রসদ নিয়ে যাচ্ছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় প্রায় ৮৯০০ ফিট এবং এখানে গাছপালার পরিমান অনেক কম। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান কম হওয়াতে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যাথা করছিল। আমাদের দলের বেশ কয়েকজন এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হবার পর আমরা একদিন থেকেই সোনামার্গ ত্যাগ করার সিদ্বান্ত নেই।

আমি এর থেকে বেশি হাইটে অনায়াসে উঠলেও অদ্ভুত কারনে সোনামার্গের ভ্যালিতে অক্সিজেন স্বল্পতায় মাথাব্যথায় ভুগছিলাম এবং প্রচুর ঘুম ঘুম আর ক্লান্ত লাগছিল।

গন্ডোলা রাইড এবং গুলমার্গ

এই ট্যুরের সবচেয়ে বড় আকর্ষন আমার কাছে ছিল গুলমার্গ এর গন্ডোলা রাইড। কেবল কারে চড়ে জংগল আর বরফের উপর দিয়ে যাওয়াটাকে আমি অন্যরকম থ্রিলিং ভেবেছিলাম। যদিও আবহাওয়াগত কারনে ফেইজ-২ এর টিকিট আমরা কাটতে পারিনি। কেবলকারে চড়ে ফেইজ-১ এ গিয়ে আপনি কোন বরফ দেখতে পারবেন না। অন্তত এই মে মাসে ত নয়ই।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 20
ফেইজ-১, গন্ডলা রাইড

গুলমার্গে যাবার সেরা সময় শীতকালে। যখন বরফ আবৃত থাকে সব। এই জায়গা স্কিইং করার জন্য বিখ্যাত। ঘোড়ায় চড়েও ভ্যালি দিয়ে যাওয়া যায়। যথারীতি এখানেও ঘোড়াওয়ালাদের দৌরাত্ব আপনাকে ভোগাবে। ভিডিওতে আমি কিছুটা ধারন করেছি প্রখর রোদের মাঝে গুলমার্গের সৌন্দর্য, কিন্তু এটা আসলে গুলমার্গের শীতকালের তুলনায় কিছুই নয়।

দালাল আর ট্যুরিষ্টের ভীড়ে গুলমার্গ একটা বাজারে পরিনত হয়েছে।

আমাদের ট্যুরের প্রায় শেষ দিকে চলে এসেছি আমরা। দশ দিনের লম্বা সফর শেষ হচ্ছে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী হাউজবোট লাইফের স্বাদ নিয়ে আর শিকারা রাইড করে।

হাউজবোট আমাকে ব্যাথিত করেছে। এখানে পরিবার নিয়ে থাকার মত অবস্থা খুব একটা নেই। নোংরা পানিতে হাউজবোট গুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ডাল লেকের সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও কোথাও নেই। এখানে শিকারা রাইড করা আরও বিরক্তিকর। বারবার বিভিন্ন নৌকা এসে জিনিসপত্র বিক্রি করার চেষ্টা করবে আপনার কাছে। এদের সাথে দরদামে সহজে পেরে উঠবেন না।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 21

আপনার কাছে স্যাফরন বা জাফরান বিক্রির চেষ্টা হবে কমদামে। কিনেছেন তো ঠকেছেন!

আমাদের ট্যুর অপারেটর আমাদেরকে এখানকার পরিস্থিতি আগে থেকে ব্যাখ্যা করেনি। অযথাই আমরা নৌকা দিয়ে লাগেজপত্র নিয়ে টানাহেচড়ায় পড়েছিলাম।

আপনার যদি হাউজবোটে থাকার স্বপ্ন থাকে তবে নির্দ্বিধায় সেটা ট্রাভেল প্লান থেকে বাদ দিয়ে দিন।

আমার চোখে কাশ্মীর

আমি কোথাও গেলে সেখানকার স্থানীয় লোকজনের সাথে মিশে যাবার চেষ্টা করি। আমার একটা ব্যাকপ্যাক বাদে সাথে কিছুই থাকে না। কিন্তু পরিবার নিয়ে প্লেজার ট্রিপে গেলে ভিন্ন কথা। পয়সা খরচ করে কিছুটা আরাম আমি চাইতেই পারি।

কাশ্মীর প্লেজার ট্রিপের জন্য আদর্শ নয়। আর কোন ট্যুর কোম্পানির সাথে তো যাওয়াই উচিত নয়, খরচ অসম্ভব রকম বেড়ে যাবে। সাথে ড্রাইভারের ইশারায় জিনিসপত্রের দাম আপনার জন্য দ্বিগুন হয়ে যাবে।

কাশ্মীরের যে হোটেল গুলোয় ছিলাম তার মধ্যে গ্রীন একর আমার কাছে অসাধারন মনে হয়েছে। পেহেলগামের হোটেল গুলোও অসাধারন দেখতে। ভেতরে সুযোগ সুবিধাও ভালো। তবে যাবার আগে বুকিং দিয়ে যেতে হবে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর 22
ঢাকা থেকে কাশ্মীর 23

কাশ্মীরের একটা জিনিস আপনার খুব চোখে পড়বে সেটা হল রাস্তায় একটু পরপরি মিলিটারি স্টাইলে অটোমেটিক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ।

কাশ্মীর মুসলিম প্রধান হলেও এদের দোকানে গরুর মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করা দেখতে পাবেন না। আমাদের ড্রাইভার জানিয়েছে এটা নাকি মোদি সরকারের চাল।

এদের দু-তিনজনের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম এরা পাকিস্তানকে খুব পছন্দ করে, যদিও পাকিস্তানের সাথে যাবার কোন ইচ্ছা নেই! একজন ট্যুরিস্ট হিসেবে আমি যখন তাদের পলিটিক্যাল ইস্যুতে কথা বলতে অপারগতা জানিয়েছিলাম, তখন আমাদের ড্রাইভার বেশ মনক্ষুন্ন হয়েছিল। সে বারংবার বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের তুলনা করতে চাইছিল। বলছিল কাশ্মীর আর বাংলাদেশের অবস্থা একই রকম! আমি তার কথায় সায় না দেয়ায় সে হতাশ হয়। ইসরাইলের প্রতি এদের চরম ঘৃনা রয়েছে।

মূলত কাশ্মীরের স্টেট পাওয়ার ফিরে পাওয়াটাই তাদের দাবি। যদিও এদের ট্যুরিষ্ট থেকে রাস্তা-ঘাট, মোবাইল, গাড়ি সবই ভারতীয় সরকারের দেয়া, তবুও এরা কেন্দ্র সরকারের খবরদারি পছন্দ করছে না। জিও-পলিটিক্সি যদি কিছু বুঝে থাকেন তবে কাশ্মীর গেলে এর একটা চাক্ষুষ উধাহরন দেখতে পারবেন।

ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠেও যে মানুষ হিসেবে মানুষকে চিন্তা করা যায় এই বোধের উন্মেষ কাশ্মীরের সাধারন জনগনের মাঝে নেই।

বেশিরভাগ দোকানে ইন্টারন্যাশনাল কার্ড চলে না। পর্যাপ্ত ডলার বা রুপি ক্যাশ নিয়ে যাবেন। আর ট্যুরিস্টদের এরা বোকা বানাতে খুব ওস্তাদ। যাই কেনেন দরদাম করে কিনবেন। ২০০০ রুপির শাল দামাদামি করে ৫০০ থেকে ৭০০ রুপিতে নিতে পারবেন।

আমার ব্যাক্তিগত মতামত অনুযায়ী ঘুরতে গেলে কিছুই কেনার দরকার নেই। স্মৃতি হিসেবে অসংখ্য ছবি আর গল্প নিয়ে ফেরত যান।

খাবার দাবারের ব্যপারে সচেতন থাকবেন। দেখতে সুন্দর হলেও এদের খাবার খুব একটা আহামরি গোছের কিছু নয়। মাক্কি রোটি, নুন চা, কাওয়া চা – এই সকল হাবিজাবিতে পয়সা কম খরচ করবেন, খুবই অখাদ্য, অনেকটা আমাদের সাতরঙ এর চা এর মত।

কাশ্মীর সুন্দর, তবে অবাক বিস্মিত হয়ে যাবার মত কিছু নয়। আমার কাছে মানালি এর থেকে অনেক বেশি সুন্দর আর পর্যটক অনুকুল মনে হয়েছে। হয়ত একেক ঋতুতে এর একেক রকম রুপ দেখা যায়। আপনি যাবার আগে অবশ্যই বর্তমান আবহাওয়ার ব্যাপারে খবর নিয়ে যাবেন। এদের এখানে একটা কথা প্রচলিত আছে, “নারীর মন আর কাশ্মীরের আবহাওয়া- যে কোন সময় বদলে যায়।”

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This