আমার কারো উপর রাগ নেই –
গলির মোড়ের চায়ের দোকানের ছেলেটা
যে ধার দেবে না বলে চোখ ঘুরিয়েছে
চল্লিশ কিংবা বায়ান্নর যে রিকশাওয়ালা –
ভাড়া কম দিয়েছি বলে পেছনে গালি দিয়েছিল!
দুরন্ত যে চার চাকা চলে যাবার সময়
আমাকে ভিজিয়েছিল রাস্তার জলে…
আমার কারো উপর রাগ নেই।
ধুলোবালির উপর রাগ নেই, শস্য দানার উপর নেই,
কাঠবেড়ালীর উপর নেই, হুতোম পেঁচার উপর নেই,
হেলে পড়া শিমুল আর জারুল গাছের উপর রাগ নেই,
বিকেলের ঘুমের সময় যে কাক তার স্বজন ডেকে যায় – কর্কশ স্বরে…
এদের কারো উপর আমার রাগ নেই।
নত মাথার মানুষেরা যারা জীবন থেকে পালায় ফুটপাত ধরে,
বাসে-রেলে যারা বিনা ভাড়ায় ঝুলে যায়,
মেয়ে দেখলে চোখ বড় করে তাঁকায় –
যাদের মস্তিষ্ক ঘুরে বেড়ায় অন্ডকোষের অলিগলিতে
এদের কারো উপর আমার রাগ নেই।
যারা জীবনের খোঁজে এই প্রানহীন শহরের ফুটপাতে –
পথে ঘাটে যারা সাম্যের কথা বলে রেষ্টুরেন্টে আর পার্কে,
মিছিল শেষে যে ছেলেটা আয়েশ করে সিগারেটে সুখটান দেয়
যারা উপরির টাকা দিয়ে পূন্য কিনে মিথ্যের বেহেশতে যায়
আমার কারো উপরে রাগ নেই।
আমার শুধু অভিমান হয় মাঝে মাঝে
অভিমানে আমার পাঁজর শক্ত হয়ে আসে
যখন খুব বেশি বৃষ্টি পড়ে – বাতাসে মাটির গন্ধ ছোটে
এই শহরের গলিতে চায়ের দোকানে আড্ডা জমে –
তখনও কেউ জীবন দেখে না, কবিতা পড়ে না।
জীবনের খোঁজে এরা – জীবন থেকে পলাতক,
মেঠো পথ, ফুল-পাখি, অশ্বথের ছায়া, নদীর শ্যাওলা ধরা ঘাট,
চরাচর অন্ধ করে দিয়ে ভীষন শব্দে পৃথিবীতে নেমে আসা বজ্র
সব কিছু থেকে এরা পালায়।
এরা জীবনের খোঁজ মেঠোপথে করে না, গ্রহান্তরে করে না,
মানুষেরা আজ তাদের শীতল কক্ষে বসে নামতা কষে।
আমার ভীষন অভিমান হয়, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,
এই শীতল কক্ষে বসে আমার নিদ্রাহীন কাটে।
তবুও আমার কারো উপর কোন রাগ নেই।
0 Comments