জীবিত থেকেও কিছু মানুষও মাঝে মাঝে মরে যায়। দেহ বাইরে নড়াচড়া করে, খায় দায় ঘুমায়, কিন্তু ভেতরটা থাকে মৃত। আশেপাশের অনেক মানুষই এই জীবন্মৃত অবস্থায় কাটিয়ে দিচ্ছে বছরের পর বছর।
এরা কারো সাথে কথা বলে না, কারো বিষয়ে নাক গলায় না, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে অল্প কথায় জবাব দেয়। নিজেকে কারো কাছে প্রমান করার বা ভালো দেখানোর কোন ধরনের চেষ্টাই করে না। জীবিত কিন্তু খুবই নিঃস্পৃহ একটা জীবন যাপন করে।
দেখলে মনে হবে বেঁচে থাকাটা খুব ক্লান্তিকর তাদের কাছে। শুধু পরিবারের কাছে কিছু দায়বদ্ধতা আছে বলেই নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
আদতে এদের কাছে পুরো দুনিয়াটা মরে গেছে। জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে এমনভাবে তারা মানসিক ব্যাথা পেয়েছে যে মানব জাতির উপরেই ভরসা চলে গেছে।
এরা জীবন্মৃত। এদের কাছে পুরো পৃথিবীর মানুষ মরে গেছে, আর আমরা বুঝে নেই উল্টোটা।
আমরা কখন কোথায় কার কাছে মরে গেছি তা নিজেরাই অনেক সময় বুঝতে পারি না। আবার অনেক মানুষ অনেক আগেই আমাদের কাছে মরে গেছে সেটাও তাদের বলি না। কাউকে সুযোগ দিতে দিতে, ভালোবাসতে বাসতে এমন একটা সময় আসে যখন আর সহ্য হয় না। তখন আমরা তাদের সযত্নে এড়িয়ে চলি। তাদের কোন কিছুতেই আর নাক গলানোর ইচ্ছা হয় না। “কেমন আছো” এই বাক্যটিও আর বলি না।
যদি খুব কাছের মানুষ হয় তবে তাকে বুঝতে না দিয়েও আমরা এড়িয়ে যেতে চাই তাদের ছায়া। এরা আমাদের কাছে মরে গেছে।
সব মানুষেরই একটা গোপন খাতা থাকে। সে যত বড় হয় সেখানে একটা একটা করে নাম লেখে সে। প্রিয় মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বয়স আরো পেরোয়, নাম লেখার সংখ্যা কমতে থাকে, এবার কাটার পালা। প্রিয় মানুষের তালিকা থেকে কাউকে ছেঁটে ফেলা খুব কষ্টকর একটা প্রক্রিয়া। সেই কাটাকাটি যখন শেষ হয়, সেই মানুষটা আমাদের কাছে মরে যায়।
আমরা যাদের ভালোবাসি, তাদের কাছে আমাদের প্রাপ্তির পারদটাও অনেক বড় হয়, আমরা সমপরিমানে না হলেও কিছুটা ভালোবাসা আর বিশ্বাস প্রতিদানে আশা করি। যখন সেটা পাই না আমরা ব্যাথিত হই। প্রিয় মানুষের স্বার্থপরতা আমাদের কাঁদায়, আমরা তাদের বারবার সুযোগ দেই। কিন্তু মহাবিশ্বের আর সব কিছুর মতই ভালোবাসাও অসীম নয়। একসময় বিশ্বাস ভঙ্গের যাতনা এতটা তীব্র হয়, আমরা গোপনে তার নাম আমাদের সেই খাতা থেকে কেটে দেই।
কোন কিছুতেই আর সেই জায়গাটা তাকে ফেরত দেয়া হয় না। কত প্রিয় মানুষ আমার এই খাতায় কাটা পড়েছে, আবার আমিও কতজনের খাতা থেকে মুঁছে গিয়েছি জানা নেই!
মানুষ নিঃস্বার্থভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারে না। মানুষ ভালোবাসে নিজেকে সুখী রাখার জন্য। সেটাই যদি না পাওয়া যায় তবে মিছে ভালোবাসা দেখিয়ে কি লাভ?
নিজেকে এই ব্যাথা থেকে বাঁচানোর একটা পদ্ধতি হচ্ছে, ক্ষমা করে দেয়া।
ক্ষমা করে দিন, আশে পাশের সবাইকে ক্ষমা করে দিন। তবে সবার আগে নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন। আমরা দেবতা নই, মানুষ মাত্র। আমাদের ভুল হবেই। নিজেকে ক্ষমা করতে শিখলে, ভুল মানুষকে ভালোবাসার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন।
কারো জন্য আপনার জীবন থেমে থাকবে না। Life will always find a way – বেঁচে থাকুন, নিজের জন্য বাঁচুন।
0 Comments