বহুবার বলে ফেলা, তারপরও যতবার বলি ভালো লাগে, আমাদের সবার কমন একটা অসুস্থতার নাম জাহাঙ্গীরনগর। যতবার ফেরত যাই নিজের একটা অংশকে আবার ফিরে পাই।
নাহ, এই পোস্টটা কোন আবেগ মাখানো রঙচঙে কবিতা শোনানোর জন্য নয়। একান্তই নিজের কিছু অনুভুতি স্মৃতির খাতায় লিখে রাখার জন্য। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৯ই নভেম্বর তারিখে আমাদের বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়ে গেলো।
বর্তমান এবং প্রাক্তন কিছু (হিরো) ছাত্রের ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রায় না হতে যাওয়া একটা অনুষ্ঠান কিভাবে কিভাবে যেন অসাধারন হয়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন যে সকল প্রিয়মুখ গুলো সারাক্ষন আশে পাশে দেখতাম অনেকদিন পর তাদের একটা বড় অংশকে আবার দেখতে পারলাম।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমার হঠাত করে একটা কথা মনে হয়েছিল, আমরা কেন এই ধরনের অনুষ্ঠান করতে চাই বা অংশগ্রহন করতে ইচ্ছুক থাকি?
আমারটা বলি, যে সকল প্রিয়মুখ গুলোর সাথে আপনার জীবনের সেরা একটা সময়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তাদের আবার দেখতে পাওয়া। সেই একই জায়গায়, একই বিদ্যাপিঠে। পুরনো দিনের মত করে আবার কিছুটা সময় নির্ভেজাল অতীতের রোমন্থন।
যারা আসতে পারেনি তাদের জন্য সমবেদনা রইল। যারা অনুষ্ঠানটির বিরোধিতা করেছিলেন, আমাদের প্রিয় এবং অপ্রিয় শিক্ষকগন তাদেরকেও শুভেচ্ছা রইল। ইগোর বেলুন বেশি ফোলালে কিন্তু ফেটে যেতে পারে।
একটা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। কিভাবে চলতে হয়, কিভাবে কথা বলতে হয়, কি করে প্রেশার সহ্য করতে হয়।
এই বিষয়গুলো আগেও আমরা অল্পবিস্তর জানতাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরে এসে আমরা সারা জীবনের জন্য যে পাথেয় সংগ্রহ করি তা আর কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের দিতে পারে না।
কেউ রাজনীতির তালিম নেয়, কেউ সাহিত্যিক হয়ে ওঠে, কেউ হয়ে যায় বড় কর্পোরেট। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মিলন মেলার কাছে অনেক ঋণী। এখানেই আমাদের নতুন করে জন্ম হয়। এটাই আমাদের দ্বিতীয় জন্মের আতুঁড়ঘর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র, শিক্ষক-কর্মচারী সবার সাথে এক বিশাল নেটওয়ার্কে আমরা যুক্ত হয়ে যাই। ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্দ বন্ধন। তাইতো পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে থেকেও জাহাঙ্গীরনগর নাম শুনলেই আমরা ক্ষনিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়াই।
মনের কোনে উঁকি দিয়ে যায় সবুজের এক প্রাঙ্গন, সবুজ রঙা বাস, ডেইরি গেট, প্রান্তিক, লাল ইটের দালান। আমাদের শত সুখ-দুঃখের স্মৃতি বিজড়িত জ্যোৎস্না রাত, ক্লান্ত দুপুর আর ঘুম ঘুম ক্লাসরুম।
জানি এই প্রাঙ্গন হেসে যাবে আরো শত বছর। আমাদের কেউই হয়ত থাকব না সেদিন।
কিন্তু, ইতিহাস স্বাক্ষী, একদিন তোমাদের মত আমরাও এই সবুজের চত্বরে উদ্দাম জীবনের গানে হেসেছিলাম। আমরাও ভালোবেসেছি, ঘৃনা করেছি আর নিয়েছি জীবনের সব থেকে সেরা পাঠ।
আবার যদি নাও ফিরে আসতে পারি এই মায়াময় সবুজ চত্বরে, তবুও আমাদের স্মৃতি রয়ে যাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক খাঁতায়।
বিঃদ্রঃ যে জুনিয়রকে ধন্যবাদ না দিলে নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়ঃ “হাসান প্রিন্স“। ভাই তুই জীবনে যেখানেই যাস, যাই করিস, মনের গহীন থেকে তোর জন্য শুভকামনা থাকবে।
অভিনন্দন মাহমুদুর রহমান জনি, একজন সফল ছাত্র নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক হিসেবে। কিছু করার ইচ্ছেটাই যদি প্রধান হয় তবে প্রবল বাধাও তাকে আটকাতে পারবে না। তোর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
এবার নিজে কোন ছবি তুলিনি, তাই এখানে যে সকল ছবি দিলাম তা আমার নয়। তবে কেউ ক্রেডিট নিতে চাইলে সানন্দে দিয়ে দেবো। কিছু টুকরো টাকরা ছবি ফেইসবুক শেয়ার থেকে জড়ো করা।
দুঃখ, একটা সদালাপী হাসিখুশী মানুষ আমাদের মাঝে নেই, কল্লোল ভাই। আজও যার প্রয়ান আমাদের আড়ালে অশ্রু ফেলতে বাধ্য করে।
আরো কিছু নাচানাচির ভিডিও মোবাইল ক্যামেরায় ধারন করা। সেন্ট্রাল ফিল্ড রাতের বেলা কজন নিশাচরের জন্য ছিল উন্মুক্ত। আমাদের কিছু করার নেই শুধু বাঁধ ভাঙ্গার আনন্দে সামিল হওয়া ছাড়া। আমরা এখানে কবি নই, গায়ক নই, চাকুরীজীবি নই, শুধু কজন যুবকের অহেতুক নির্ভেজাল উল্লাসে মেতে ওঠা।
বিঃদ্রঃ এই আনন্দ শুধু কামাল উদ্দিন হলে রাত যাপন করা কজন প্রাক্তনের নৃত্য প্রতিভার প্রকাশ। 🙂
0 Comments