রাস্তায়… (অসমাপ্ত গল্প)

Feb 12, 2018গল্প, সাহিত্য0 comments

লোকটা মাটিতে পড়ে যাবার পরও শাহেদ আরো দুটো লাথি দিল। মাপা লাথি পাজর বরাবর। থ্যাপ করে একটা শব্দ হল। একটা হাঁড় শিওর ভেঙ্গেছে। মরবে না কিন্তু কয়েকমাস ভুগতে হবে।

তার সঙ্গী চার পাঁচ হাত দূরে পড়ে আছে। গলা চেপে ধরে এখনও শ্বাঁস নেয়ার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরকম কষ্ট বোধহয় সারা জীবনে আর কখনও পায়নি। আজীবন মনে রাখবে এই মারের কথা।

তৃতীয় লোকটার আগেই ভেগেছে। সে একটু দূরে দাঁড়িয়ে সঙ্গীদের সাহস দিচ্ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে পগার পার। ওর পিছে যাবার কোন মানে হয় না।

রাস্তায়... (অসমাপ্ত গল্প) 1

শাহেদ মাটি থেকে নিজের ল্যাপটপের ব্যাগটা কুঁড়িয়ে নিয়ে আশে পাশে দেখল। কেউ নেই এখনও। একটু আগেই একটা টহল পুলিশের গাড়ি গিয়েছিল সে যখন ঔষুধ কিনে দোকান থেকে বের হচ্ছিল। এখন তাদেরও দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ থাকলে এখন ঝামেলা আরো বাড়ত। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে শাহেদের। বাচ্চাটা অসুস্থ।

কোন খালি রিকশাও দেখা যাচ্ছে না এখন। অথচ মগবাজারের এই এলাকা থাকে রিকশায় পরিপূর্ন। প্রয়োজনের সময় কিছুই হাতের কাছে থাকে না। শাহেদের বাসা শান্তিনগরের দিকে হেঁটে গেলে আধাঘন্টার মত লাগবে।

ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল অফিস থেকে বের হবার পরেই। মাসের প্রথম দিকে বেতন পায় সবাই এটা ভালো করেই জানে এইসব ছিঁচকে চোরেরা। তারপর তার হাতে বেশকিছু ফল, খাবারের প্যাকেট এবং গিফটের বড় একটা প্যাকেটও ছিল। গলিতে ঢুকতেই তার নজরে আসে তিন-চারজন তার দিকে নজর রাখছে। সাধারন কেউ হলে এত কিছু বুঝত না। কিন্তু অনেকদিনের ট্রেইনিং, রক্তে মিশে আছে।

ফার্মেসী থেকে বের হয়ে কিছুদুর যাবার পরেই যখন একজন পেছন থেকে ডাক দিল শাহেদ ধরেই নিয়েছিল মানিব্যাগের হাজার তিনেক টাকা দিয়ে দিলেই আর ঝামেলা বাড়াবে না এরা।

কিন্তু তাকে অনেকটা জোরপূর্বক ছোট একটা গলিতে ঢুকিয়ে ফেলে এরা। পেটের কাছে ছোট একটা পিস্তল ধরে রেখেছিল একজন। কথামত মানিব্যাগ বের করেও টাকাও দিয়ে দিচ্ছিল। কি দরকার এই কয়টা টাকার জন্য রিস্ক নেয়ার। কিন্তু পিস্তলধারীর সঙ্গী তার হাতের খাবারের এবং ঔষুধের প্যাকেট ও কাড়াকাড়ি শুরু করে দিল। আরেকজন একটু দূরে ছিল পাহারা দেবার জন্য।

ঘাড়ের পেছনে যখন প্রথম থাবড়া দেয় পিস্তল্ধারী তখনই শাহেদের মাথায় আগুন ধরে যায়। সাথে কাঁধে ঝোলানো ল্যাপটপ এর ব্যাগটার দিকে হাত বাড়ানোর আগেই শাহেদ প্রথম আগাত করে। পিস্তল ধারী খুব কাছে চলে এসেছিল শিকারের, বুঝতেই পারেনি নিজেই কখন শিকার বনে গেছে এই সাধাসিধে দেখতে লোকটার।

ল্যাপটপ দেয়ার ছলেই প্রথম আঘাত করে শাহেদ, গলায়। তারপর একটা হিপ-থ্রো। তার সঙ্গী আরেকটা আঘাত পেল পরের সেকন্ডেই। পিস্তল ধারীকে এরপর মাপা একটা লাথি দিল শু-দিয়ে, পাঁজরে। তিন নাম্বারকে এরপর আর দেখা গেলো না। ওর হাতের পিস্তল কোথায় পড়েছে আধো অন্ধকারে তা ঠাহর করা গেলো না।

পুরো ঘটনা ঘটাতে দশ-পনেরো সেকন্ডের বেশি নেয়নি শাহেদ। কিন্তু তার বস দেখলে বলত শাহেদ স্লো হয়ে যাচ্ছে। বয়স হচ্ছে তো, আর কত। তাইত ফিল্ড অপারেশন থেকে সরিয়ে অফিস ডেস্কে এনে বসিয়ে দিয়েছে।

কি আর করা- লম্বা লম্বা পা ফেলে শাহেদ গলি থেকে বেরিয়ে এলো। রিকশা না পেলে হেঁটেই যেতে হবে। সব রিকশাওয়ালারা নবাব হয়ে গেছে। রাত বাজে মাত্র দশটা এখনই তড়িঘড়ি করে ছুটছে, ডাকলেও তাঁকাচ্ছে না।

পকেটের ফোনটা এইসময় বেজে উঠল।

ঃ হ্যাঁ নাজমা, আমি বের হয়েছি অফিস থেকে……। রিকশা পাচ্ছিলাম না হেটেই আসছি।

ঃ বাবুর ঔষুধ নিয়েছ?

ঃ নিয়েছি বাবা, মনে আছে। এতবার বলতে হবে না। আজকে এই নিয়ে চারবার বললে।

ঃ তোমার তো আবার ভুলে যাবার রোগ আছে। আরেকটু আগে অফিস থেকে বের হতে পারলে না?

শাহেদ কিছু বলল না। নাজমার সাথে বেশী তর্ক করা যায় না। একটুতেই ঝগড়া বেঁধে যায়। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল শাহেদ। ………

 (………… একটি অসমাপ্ত গল্প )

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This