নীতি কথা বলে কি লাভ হয় আসলে?
কেউ শোনে?
কেউ শোধরায় নিজেকে?
নাহ…। এরকম কোন নজির এখনো দেখিনি।
দেশের বাইরে যাদের যাবার অভ্যাস আছে বা থাকেন তারা সবসময়ই আফসোস করেন, হায়রে আমার দেশের মানুষগুলা যদি এমন হোত! আমাদের রাস্তাঘাট আর স্বভাব যদি এদের মত হোত!
কি লাভ?
দিন শেষে আমরা নিজেদের নিয়ে এতই গর্বিত থাকি যে কেউ আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে গেলেই তার দিকে মার মার করে ছুটে যাই।
এদেশে নীতি কথা বলে লাভ কি?
একজন মাশরাফি একদিনে তৈরি হয়নি। আমাদের মত দেশের জন্য তিনি একজন আইকন। তার ক্যাপ্টেন্সী, দেশের জন্য জানপ্রান দিয়ে খেলা, সব আমরা ভুলে যাই এক নিমিষে।
মাশরাফি অনেকবার বলেছেন, তিনি এত সম্মানের পাত্র নন। তিনি শুধুই একজন এন্টারটেইনার। খেলা দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করতে পারেন। এর বাইরে তার দেবার জায়গাটা অনেক অল্প।
তিনি হঠাত করে সিদ্ধান্ত নিলেন রাজনীতিতে নামবেন।
ব্যাস হয়ে গেল?
দেশের আপামর ক্রিকেট বোদ্ধা (ফেইসবুকীয়) তার বিরুদ্ধে চলে গেল?
এতদিনের জমানো ভালোবাসা সব শেষ?
হতেই পারে, আমরা বাঙ্গালী না?
নাকি তিনি ক্ষমতাসীন দলের হয়ে রাজনীতি করবেন বলে আপনাদের গায়ে লাগছে?
মাশরাফি যদি ভেবে থাকেন তিনি রাজনীতিতে নেমে দেশের জন্য আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন, তাতে আপনার গা চুলকাচ্ছে কেন?
রাজনীতি খারাপ…খুব খারাপ? সবাই খারাপ এইখানে?
এইখানে মাশরাফির মত লোক কেন আসবে তাই?
হুদাই প্যাচাল দেন কেন ভাই? ফেইসবুকে গালি দেয়া বাদে কোন বালটা ফালাইছেন আপনি দেশের জন্য?
সোজা কথায় চিন্তা করেন, মাশরাফির মধ্যে নেতৃত্ব দেবার গুনাবলী অনেক প্রকট। রাজনীতি করাও তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। তার মত লোক যদি আমাদের পঁচে যাওয়া সিস্টেমে আসে আমাদের খুশি হবার কথা। আমাদের পরিবর্তন দরকার আর ভালো লোকেরা আবার রাজনীতিতে আসা শুরু করলে আমরা আবারো আশা করতে পারি।
নাকি একটা বিশেষ দলের হয়ে নমিনেশন নেয়াতেই আপনাদের এই চুলকানী?
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মাশরাফির সিদ্ধান্ত সঠিক। আমাদের এইরকম আরো লোক দরকার যারা মনে করে রাজনীতি করে দেশটাকে কিছু দিতে পারবে।
তার ক্যারিয়ারও প্রায় শেষের দিকে, অনেক ভাবনা চিন্তা করেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আশা করি।
একটা জিনিস ভেবে দেখেছেন, যেখানে বেশিরভাগ ভোট প্রার্থীকে জনগনের কাছে গিয়ে গিয়ে প্রচার প্রচারনা করতে হবে, সেখানে মাশরাফি কত এগিয়ে আছেন? তিনি এমনিতেই একটা পরিচিত মুখ। তার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ থাকলে তা নড়াইলবাসীই ভালো বলতে পারবে।
আপনি কি-বোর্ড স্বাধীনতার নামে তাকে যথেচ্ছা গালি দেবার অধিকার রাখেন না।
আসেন একটা গল্প শুনি –
এক গ্রামে একজন কৃষক ছিলেন.. তিনি দুধ থেকে দই ও মাখন তৈরি করে বিক্রি করতেন..
একদিন কৃষকের স্ত্রী মাখন তৈরি করে কৃষককে দিলেন বিক্রি করতে..
কৃষক তা বিক্রি করার জন্য গ্রাম থেকে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন..
মাখন গুলো গোল-গোল রোল আকৃতিতে রাখা ছিল.. যার প্রত্যেকটির ওজন ছিল ১ কেজি করে..
শহরে পৌঁছে কৃষক প্রতিবারের ন্যায় পূর্ব নির্ধারিত দোকানে মাখন গুলো দিয়ে পরিবর্তে চা.. চিনি.. তেল ও তার সংসারের প্রয়জনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে আসতেন..
আজ কৃষক চলে যাওয়ার পরে দোকানদার মাখনের রোল গুলো একটা একটা করে ফ্রিজে রাখার সময় ভাবলেন মাখনের ওজন সঠিক আছে কিনা আজ একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক..
মাখনের রোল গুলো ওজন করতেই উনি দেখলেন মাখনের ওজন আসলে ১ কেজি নয় তা প্রতিটা আছে ৯০০ গ্রাম করে..
পরের সপ্তাহে আবার কৃষক উক্ত দোকানে মাখন বিক্রি করতে গেলেন..
দোকানের সামনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দোকানদার কৃষকের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে লাগলেন..
‘বেরিয়ে যাও আমার দোকান থেকে.. এবার থেকে কোন বেঈমান চিটিংবাজের সাথে ব্যাবসা কর.. আমার দোকানে আর কোনদিন পা রাখবে না.. ৯০০ গ্রাম মাখন ১ কেজি বলে বিক্রি করা লোকটার মুখ আমি দেখতে চাইনা..
কৃষক বিনম্র ভাবে কম্পিত স্বরে দোকানদারকে বললেন- দাদা! দয়া করে রাগ করবেন না.. আসলে আমি একজন খুবই গরিব মানুষ.. দাড়িপাল্লার বাটখারা কেনার মতো পয়সা আমার নেই.. তাই আপনার থেকে প্রতিবার যে এক কেজি করে চিনি নিয়ে যেতাম.. সেটাই দাড়িপাল্লার একপাশে রেখে অন্য পাশে মাখনের রোল মেপে নিয়ে আসতাম।
কি দাদা বুঝা গেল ব্যাপারটা …?
(সংগৃহিত)
পরিশেষে, নিজের পাল্লা দিয়ে সবাইকে মাপবেন না। ভালো কাজ করার চেষ্টা করলে তাকে উৎসাহ দিন। কানাডা গিয়ে সপরিবারে সেটেল হবার চেষ্টা না করে দেশটাকে কানাডা বানাবার চেষ্টা করুন।
খুব ভালই ছিল গল্পটা। তবে আমরা চাইলে অভ্যাসটা পাল্টাতে পারি, শুধু চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন আনতে হবে।
ওটাইতো ভায়া… বাংঙ্গালী চিন্তা এবং মননে খুবি অসভ্য। শুধু ফেইসবুকে অজু করে আসে সব ভালো হতে।