দ্বিতীয় পৃথিবী (পর্ব -১)

Jun 29, 2014গল্প, সাহিত্য0 comments

|| এক ||

আমরা মাইক্রোস্কোপের নিচে যেভাবে জীবানুদের পর্যবেক্ষন করি ঠিক সেভাবেই পৃথিবী নামক এই নীল গ্রহটাকে পর্যবেক্ষন করছে মানুষের থেকে কল্পনাতিত বুদ্ধিমান এক জাতি। আমাদের সচরাচর প্রানের সংজ্ঞায় হয়ত তাদের প্রানি হিসেবে আমরা মানতে পারব না কিন্তু তাতে তাদের কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। ক্ষুদ্র কিছু কার্বন ভিত্তির বস্তু বাদে আমাদেরকে তারা আর কিছুই ভাবে না।

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- এত বুদ্ধিমান প্রানি হলে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি বা করছে না কেন? উত্তরটা সোজা- আমরা পিপড়া বা মাইক্রস্কোপের নিচের ব্যক্টেরিয়ার সাথে যোগাযোগ করার কথা যেমন কখনও ভাবিনি তারাও তেমনি ভাবেনি মানুষের সাথে যোগাযোগের কোন দরকার আছে। তার ওপর এরকম অনেক প্রজাতিই তারা পৃথিবীতে আসতে এবং চলে যেতে দেখেছে। তাই সময়ের বিচারে মানব জাতি তাদের কাছে বিন্দুর মত নগন্য একটা বিষয়।

কিন্তু ইদানিং এই প্রজাতি তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে, এই ক্ষুদ্র গ্রহে এর আগে এমন কোন প্রজাতি আসতে পারেনি যারা গ্রহের গন্ডি পেরিয়ে পাশের গ্রহেও যেতে পেরেছে। আরো চিন্তার বিষয় হল এরা নিজেরাই নিজেদের বাসস্থান ধ্বংস করছে এবং বিলুপ্ত করছে আরো অনেক প্রজাতি। ব্যপারটা ভাবিয়ে তুলেছে এই বুদ্ধিমান প্রানিদের। আমরা ভাইরাসের সাথে যেই আচরন করি তারাও আমাদের সাথে খুব শিগগিরিই তাই করতে যাচ্ছে। কারন তাদের সাইন্স এক্সপেরিমেন্টে আমরা একটা এরর বাদে আর কিছুই না। এরর খুঁজে পাওয়া গেছে এবং তা অতি দ্রুত সংশোধন করতে হবে।

||দুই ||

জরুরি সভা বসেছে এক্সপেরিমেন্ট রুমে। এরা সবাই এই প্রটুন-৩ (ProToon-3) গ্রহের বিজ্ঞান কাউন্সিলের সদস্য। পৃথিবীর সময়ের বিচারে সভাটি প্রায় ১০০ বছর ধরে চলছে। এখানে আসলে সময়ের কোন মুল্য নেই। যারা মহাবিশ্বের যেকোন শক্তি আহরন এবং কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখে সময় নিয়ন্ত্রনটা তাদের কাছে একটা সাধারন বিষয়। মোটামুটি ভাবে, বয়স হয়ে যাবার এবং বুড়িয়ে যাবার মত মানবিক গুনাবলি তাদের নেই। অনেক্ষন নিরবতার পর সভাপতি ‘রা’ আবার কথা বলা শুরু করলেন

রাঃ– আমার মনে হয় পৃথিবী নামক এই গ্রহের পরিক্ষাটি আমরা বন্ধ করে দিলেই পারি। সেক্ষেত্রে উচ্চ কাউন্সিলে আমাদের কোন জবাব দিতে হবে না। আমার সুপারিশ হল এখানকার সব গুলো নমুনা সংগ্রহ করে অন্যকোথাও উপুযুক্ত পরিবেশে আবার নতুন করে পরিক্ষাটি আমরা শুরু করতে পারি।  আর এটাও দেখতে হবে কোন একটি প্রজাতি যাতে একক ভাবে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ না ঘটাতে পারে।

আরিনঃ আমিও এটাই সমর্থন করি। কারন এই একটা প্রজাতির কারনে আর অল্প কিছু সময় পরেই পুরো গ্রহের প্রজাতি ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে এবং নিজেরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার আরেকটা সাজেশন হোল আমরা যদি এক্সপেরিমেন্টটি নতুন কোন জায়গায় শুরু করি তাহলে এই প্রজাতিটির মধ্যে কিছু গুনগত পরিবর্তন এনে দিতে পারি যাতে তারা সহজে বংশবৃদ্ধি এবং অন্য প্রজাতি ধ্বংস করতে না পারে।

রাঃ– তবে আমার মনে হয় এই ব্যপারে বিজ্ঞানী আমাহ যা বলবেন আমাদের তাই মেনে নেয়া উচিত।

আমাহ অনেক্ষন ধরে সবার কথা শুনছিলেন। পৃথিবী পর্যবেক্ষন কমিটির তিনিই প্রধান এবং এখন পর্যন্ত তার মনে হচ্ছে না পৃথিবীর ভবিষ্যত অন্ধকার। বরঞ্ছ বেশ কয়েকটি গ্রহে তিনি দেখেছেন খাদের কিনারা থেকেও প্রজাতিগুলো ফিরে এসেছে।

আর তিনি কখনই চান না প্রাকৃতিক ভাবে যা চলছে তাতে কোনরকম হস্তক্ষেপ হোক। একেকটা প্রজাতি বিলুপ্ত হবে এবন নতুন প্রজাতি আসবে এটাই নিয়ম, সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং করা তার একেবারে অপছন্দ।

আমাহঃ– আমার মনে হয় আপনারা নমুনা সংগ্রহ করে রাখতে পারেন, কিন্তু আমি এখনই পরিক্ষাটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছি না। আমাকে আরো কিছু সময় দেয়া হোক। আমার নিজস্ব কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য সময় দরকার। এই তথ্য সংগ্রহ করলে তা আমাদের নতুন পরিক্ষাটিতে কাজে দেবে।

সভাকক্ষের প্রায় অনেকেই এই প্রস্তাবে সায় দিলেন। কেউই তাড়াহুড়ো করতে রাজি নন। অবেশেষে রা’ও এই প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন।

কিন্তু তিনি যদি তখন জানতেন বিজ্ঞানী আমাহ মনে মনে কি পরিকল্পনা করছেন তবে কখনই সম্মতি দিতেন না এবং যত দ্রুত পারতেন এই পৃথিবী পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতেন।

……… [চলবে]

0 Comments

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This