ঠিক এই মুহুর্তে কষে কাউকে কয়েকটা গালি দিলে মনটা ঠান্ডা হোত?
না হোত না!
একটা খুনের পরে কয়েকটা গালি কিংবা ফেইসবুকের একটা স্ট্যাটাস, কোন এক মন্ত্রীর রম্য ক্যরিকেচার, মানুষ জনের কিছু আহা উহু… ইত্যাদি কেমন যেন গা সওয়া হয়ে গেছে ইদানিং।
এই ছোট্ট একটা দেশ, যার বেশিরভাগ মানুষই নিতান্তই স্বার্থপর আর আপনভোলা, তারা কখন যেন খুনকেও সাধারন ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়েছে। এরা প্রতিদিন ভাত খায়, ঘুমায়, রাস্তায় দু-একটা লাশের ছবিতে লাইক আর ইমো দেয়।
কি আসে যায়?
টিভিতে দশ বিশ সেকেন্ডের একটা এক্সিডেন্টের খবর দেখায়, কি আসে যায়? আমরা আবার ভুলে যাই। নতুন করে নতুন কোন ভাইরাল গল্পে আমাদের আড্ডা মজে ওঠে।
ফেইসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রল করে আমরা চলে যাই মনুষত্যের আরো তলানিতে। এই ভালোবাসাদের কিন্তু আর ঘরে ফেরা হয় না। আমরা ঠিকঠাক ফিরি। আমাদের কি? আমার সন্তান, ভাই, স্ত্রী, বাবা-মা এরাতো ঠিক আছে।
কিন্তু… কারো কারো ঘরে ভালোবাসারা ফেরে না।
বাবাটা ফোন করে কান্নাভেজা কন্ঠে বলতেই পারে না, ‘এই শোনো আমাদের মেয়েটাকে ওরা খেলাচ্ছলে রাস্তায় পিষে দিয়েছে। ও আর বাড়ি ফিরবে না কোনদিন।”
হয়ত কোন এক বিকেলে, আকাশের দিকে তাঁকিয়ে ছোট্ট রায়হান বলে, ” মা, বাবা কি আর কোনদিন আমাকে দেখতে আসবে না? আমার উপর অনেক রাগ করেছে তাই না? আমি যদি আর দুষ্টামি না করি তাও আসবে না?
মা আঁচলে মুখ লুকান। কোন এক ঘাতক ড্রাইভার নেশার ঘোরে তার আকাশটাতে বর্ষা এনে দিয়েছে। বাবার শাসন থেকে বঞ্চিত করেছে দুরুন্ত কোন এক শিশুকে।
অথবা উল্টো, বাবা কিছুতেই তার মেয়েকে বোঝাতে পারেননা মা আর আসবে না, মাকে কেউ একজন রাস্তায় খুন করেছে। একটা যন্ত্র দানব যার নিয়ন্ত্রনে ছিল মানুষ নামের এক শুয়োরের বাচ্চা।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, খুব যে শিশু তার পিতা/মাতা হারালো তাকে স্বান্তনা দেয় কে? সে তার খেলার সঙ্গী, নির্ভরতার কোল হারাল তাকে উষ্ণতা দেবার মত কলিজা কার থাকে?
আর কত?
যদি একটা-দুটো হোত তবে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। এরা খুনকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
আর আমরা…? আমরা ফেইসবুকে গুষ্টি উদ্ধার করছি মন্ত্রীর।
যতক্ষন না আমি, আপনি বা আমাদের ভালোবাসার কেউ ঘরে ফিরবে না, আমাদের হুঁশ হবে না। আমরা যে মরেই বেঁচে যাই এই স্বার্থপর দেশে।
আমাদের মন্ত্রী পিচাশের মত হেসে হেসে খুনিদের পক্ষে সাফাই গান। আমরা নির্লজ্ব, কিভাবে কিভাবে যেন এরা মন্ত্রী হয়ে যায়, তারপর শেয়লের মত খোয়াড় থেকে একটা একটা করে মুরগী ধরে উদরপুর্তি করে।
আর কয়দিন?
আর কত দেরী?
আর কত লাশের মিছিলে আপনারা বলবেন, রাস্তায় নামলে এরকম হতেই পারে?
আর কত মা অপেক্ষায় থাকবে তার ছেলে কখন ঘরে ফিরবে?
এখন থেকে একটা কাজ করবেন, যতবার ঘর থেকে রাস্তায় বের হবেন পরিবারের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়ে যাবেন।
কারন আমরা নির্বিকার।
আমরা অসহায়।
0 Comments