ঘুরে এলাম কলকাতা

Jul 21, 2017ভ্রমন2 comments

ইন্ডিয়া পাশের দেশ হওয়াতে বেশিরভাগ বাঙ্গালীর ঘোরাঘুরির তালিকাতে প্রথম দিকেই থাকে ইন্ডিয়া। এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমার পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ড ঘুরতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা না পাওয়াতে ইন্ডিয়া ঘুরতে চলে যাই।

আগের তুলনায় ইন্ডিয়ার ভিসা পাওয়া বাংলাদেশীদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। সামনে হয়ত ই-টোকেন বাদেই আমরা ইন্ডিয়ার ভিসা পেতে যাচ্ছি।

ইন্ডিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া সোজা অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করে আপনার পাসপোর্ট, ইউটিলিটি বিল, ব্যাঙ্ক স্টেইট্মেন্ট / ডলার এন্ডোর্স এর কাগজ, আইডি কার্ড এর কপি সহ জমা দিতে হবে নির্ধারিত এপয়েণ্টমেন্ট তারিখে। ব্যবসায়ী এবং চাকুরীজীবি হলে ট্রেড লাইসেন্স এর কপি এবং NOC দেয়া লাগে। ভিসা ফি ৭২৪ টাকা। ই-টোকেন নিজে করতে পারলে দালালকে টাকা দেয়া লাগে না।

মূলত আগের তুলনায় ইন্ডিয়া বাংলাদেশীদেরকে প্রচুর পরিমান ভিসা দিচ্ছে। কাজেই ঘুরতে যাবার এখনই সময় যদি আগে গিয়ে না থাকেন।

কম খরচে ইন্ডিয়া ভ্রমন করার সব থেকে ভালো রাস্তা হল বাস আর ট্রেন। আমাদের এখান থেকে প্রচুর পরিমান বাস সার্ভিস আছে বেনাপোল এবং কলকাতা পর্যন্ত। বাস ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে সার্ভিস ভেদে।

আমি গিয়েছিলাম রয়েল কোচের বিজনেস ক্লাসে। আমি এবং আমার বন্ধু দুইজন আমরা মতিঝিল থেকে টিকেট কেটেছিলাম ৩০০০ টাকা দিয়ে। আমাদের গন্তব্যস্থল ছিল বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত। কারন আমি ভেবেছিলাম একবারে ডিরেক্ট বাস না নিয়ে গেলে খরচ কম পড়বে (!)। আদতে আমি জানতাম না, আপনাকে বেনাপোল গিয়ে বাস চেইঞ্জ করতেই হবে। তবে একবারে কলকাতার টিকিট কাটলে বাস কোম্পানির লোকেরাই আপনাকে বর্ডারে অনেক হেল্প করে।

রয়াল কোচে রাত ১১ টায় রওয়ানা দিয়ে সকাল ৫ টার আগেই আমরা বেনাপোল পৌঁছে যাই। রাস্তায় জ্যাম না থাকার দরুন আমরা বর্ডার খোলার আগেই পৌছে ছিলাম।

বর্ডার পার হবার আগে কিছু ফর্মালিটি আছে যা আপনাকে সম্পন্ন করতে হবে, যেমন ট্রাভেল ট্যাক্স পে করা, এমবার্কমেন্ট ফর্ম ফিলাপ করা। কাস্টমসে আপনার ব্যগ ব্যাগেজ চেক করানো ইত্যাদি। প্রথম প্রথম আমি ঘাবড়ে গেলেও দেখলাম আশে পাশে আরো অনেক মানুষ আছে যারা এইগুলা করছে। মিলে গেলাম তাদের দলে। প্রয়োজনে জিজ্ঞেস করে করে কাজ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই দালাল এইখানে।

যদি ঘুরতে যান তবে সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার ব্যাগ হালকা রাখার। আমি শুধু আমার ব্যাকপ্যাক নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলাম। তাই ওজন বহন করার মত কষ্ট আমাকে করতে হয়নি। অনেকেই দেখেছি পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেছেন সাথে ৫-৬ টা লাগেজ, এইগুলো বহন করে নিয়ে যাওয়া খুবই যন্ত্রনা দায়ক।

আপনার প্রথম যে কাজটি হবে বেনাপোল গিয়ে তা হল ট্রাভেল ট্যাক্স পে করা। ব্যাঙ্ক খোলে ৬ টার সময়,পাশেই বুথ, আগে আগে গিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যান। আমরা এত সকালে গিয়েও লম্বা লাইনে পড়ে গিয়েছিলা চেক-ইনের সময়। যারা ডিরেক্ট বাসের যাত্রী তাদের অবশ্য কোম্পানী সাহায্য করে থাকে। নাইলে দালালের ক্ষপ্পরে পড়ে ২০-৫০ টাকা লস হয়। সাথে একটা কলম নিয়ে যাবেন মনে করে।

আমাদের বর্ডারের এইদিকেই সবথেকে ভীড় হয়, ইন্ডিয়ার কাস্টমসে গেলে অত সময় লাগে না।

ঘুরে এলাম কলকাতা 1
ঘুরে এলাম কলকাতা 2

মনে করে সাথে সবসময় আপনার পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবধানে রাখতে ভুলবেন না।

বাংলাদেশের দিক থেকে সব ফর্মালিটি শেষ করে ইন্ডিয়ার কাস্টমসে আবার যাবার সময় আপনাকে লাইন ধরতে হবে। কারন সকালবেলা প্রচুর মানুষ ইন্ডিয়ায় ঢোকে।

বর্ডার পার হয়েই আপনি ডলার বা টাকা রুপিতে কনভার্ট করে নিতে পারবেন, কিন্তু আমার মতে এখানে যত কম ভাঙ্গানো যায় ততই ভালো, কলকাতাতে টাকা এবং ডলার উভয়েরই ভালো দাম পাওয়া যায়।

ঘুরে এলাম কলকাতা 3

এইখান থেকে আপনি ট্যাক্সি বা গাড়ি নিয়ে বনগা স্টেশনে চলে যেতে পারবেন সেখান থেকে শিয়ালদাহ স্টেশনে চলে যেতে পারবেন লোকাল ট্রেনে। অথবা প্রচুর বাস আছে কলকাতা পর্যন্ত। ভাড়া ৫০০ থেকে ৮০০ রুপির মত।

বর্ডার থেকে কলকাতা আরো ৮৪ কি.মি ভেতরে। যেতে প্রায় ২ ঘন্টার মত লেগেছিল। রাস্তাঘাট যা দেখলাম তাতে খুব বেশি আলাদা লাগেনি। কলকাতা পর্যন্ত রাস্তা আমাদের যেকোন মফস্বল শহরের মতই।

ঘুরে এলাম কলকাতা 4

মাঝখানে একটা ধাবায় থামায় নাস্তা করার জন্য যার খাবার আমার একটুও ভালো লাগে নি, দাম ও বেশি।

ঘুরে এলাম কলকাতা 5

আমাদের ইচ্ছে ছিল আমরা কলকাতার মার্কুইজ স্ট্রিটে থাকব, বেশিরভাগ বাংলাদেশীই নাকি ঐখানকার হোটেলে উঠে থাকেন। আমরা টার্গেট নিয়ে গিয়েছিলাম হোটেল ভাড়া বাবাদ প্রদিন সর্বোচ্চ ১০০০ রুপি খরচ করব। কিন্তু বিধি বাম, আমরা জানতাম না তার পরেরদিন আইপিএল এর খেলা, বেশির ভাগ হোটেলই বুক। যেহেতু পরিবার নিয়ে যাইনি, তাই আমি এবংআমার বন্ধু অমি প্রায় বিকাল পর্যন্ত ঘুরে বেড়ালাম হোটেল এর জন্য। মাঝে এক দালাল আমাদেরকে হোটেল দেখাবে বলে বেশ ঘোরাল। যেহেতু কোন তাড়া নেই, আমরাও ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম অলি গলি।

শেষ পর্যন্ত আমরা একটা মোটামুটি মানের হোটেলে উঠলাম ১৮০০ রুপি দিয়ে। রুম খুবি ছোট কিন্তু থাকতে হবে। কলকাতা গিয়েছিলাম মাত্র ২ দিন থাকব বলে। তাই খুব বেশি ঘোরাঘুরি করা হয় নি।

ঘুরে এলাম কলকাতা 6
ঘুরে এলাম কলকাতা 7
ঘুরে এলাম কলকাতা 8

একটা জিনিস মনে রাখবেন এখানে এসে পারত পক্ষে রিকশায় উঠবেন না। এরা গলা কাটতে ওস্তাদ। আর ট্যাক্সিতে অবশ্যই ওঠার আগে দরদাম করে নেবেন। বাঙ্গালী দেখলেই এরা ঠকানোর ধান্দায় থাকেন।

কলকাতার নিউমার্কেট এরিয়ার আশেপাশে প্রচুর দোকান আছে খাবারের জন্য, পার্ক স্ট্রীট হল ফাস্টফুড এর জন্য বিখ্যাত। প্রচুর ফরেনার দেখবেন এখানে খাবারের জন্য আসে।

আমি কলকাতায় বেশ কয়েকবার আমার পেওনিয়ার কার্ড ব্যবহার করেছিলাম এই সকল ফাস্ট ফুড শপে। এখানে ইন্ট্যারন্যশনাল কার্ড অনায়াসে ব্যভার করা যায়।

কলকাতা গেলে লিকার শপ হরহামেশাই চোখে পড়বে আপনার। মদের বিজনেস এখানে লিগাল হবার কারনে দাম ও খুবই কম।

কলকাতার হাওড়া ব্রিজের কাছেই অবনী শপিং মলে গিয়েছিলাম জুতা কেনার জন্য। অনেকই সুন্দর এবং অনেকটা আমাদের যমুনা ফিউচার পার্কের মত। এখানে এমন কোন ব্রান্ডের প্রোডাক্ট নেই যা আপনি পাবেন না। আর দামও অনেক কম।

ঘুরে এলাম কলকাতা 9
অবনী শপিং মল
ঘুরে এলাম কলকাতা 10

শপিং করার জন্য নিউমার্কেট এলাকা আর এই শপিং মল অসাধারন। কলকাতায় গেলে অবশ্যই চকলেট কিনতে ভুলবেন না। কমদামে এত ভালো চকলেট আমাদের দেশে পাওয়া যায় না।

ঘুরে এলাম কলকাতা 11
ক্লান্ত হয়ে আমার বন্ধু ট্যাক্সিতেই ঘুমিয়ে পড়ে

জামা কাপড়ের জন্য আমি গিয়েছিলাম বড় বাজার। অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে অনেক কম দামে। বেশ কিছু থ্রি-পিস কিনেছিলাম এখান থেকে ঘুরে ঘুরে। কিন্তু রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম থাকার কারনে ট্যাক্সির মাঝেই অমি ঘুমিয়ে পড়েছিল। 

আমরা শেষের দিন রাতে নিউমার্কেট এলাকায় কিছু কিছু ঘোরাঘুরি করেছিলাম। কলকাতার এই এরিয়াটা দেখতে অনেকটা আমাদের বঙ্গবাজারের মতই। আর কলকাতার মার্কুইজ স্ট্রীট অনেকটা পুরান ঢাকার অলিগলি।

ঘুরে এলাম কলকাতা 12

নিউমার্কেট এরিয়ার পাশের রাস্তাতেই প্রচুর স্ট্রীট ফুড পাবেন। মুখরুচক এবং কম দামে। কলকাতার বিখ্যাত পানিপুরি খেতে ভুলবেন না। অনেটা আমাদের ফুচকার মতই, শুধু ভিতরে ডাবলি থাকে না।

কলকাতার আরেকটা ভালো আকর্ষন হল এদের পাতাল ট্রেন, এরা মেট্রো বলে। সময় মত আসে আরে অনেক কম খরচে আপনি কলকাতার এমাথা থেকে সেমাথা চলে যেতে পারবেন। আমার কাছে খুবই অসাধারন লেগেছে।

কলকাতার রাস্তাঘাট আমাদের দেশের থেকে খুব একটা চওড়া নয়। তবে এদের ট্রাফিক অনেক কম এবং এরা সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলে।

কলকাতায় উবারও বেশ ভালো সার্ভিস দেয়, ট্রাই করে দেখতে পারেন।

কলকাতা ঘোরাঘুরি শেষে তৃতীয় দিন সকালে আমরা ঢাকার জন্য শ্যামলী বাসে উঠি। আমাদের হোটেল ক্যাপিলা থেকে বাস স্টেশন খুব বেশি দূরে ছিল না। কিন্তু বাস ঠিক সময়ে ছাড়েনি। প্রায় একঘন্টা লেইট ছিল।

বেনাপোল এলে ডিরেক্ট বাসের যাত্রী হবার কারনে আমাদের ঝামেলা কম হয়েছিল। অনেক কম সময়েই এবার চেক-আউট করতে পেরেছিলাম। ঢাকা পৌছাতে আমাদের প্রায় রাত ১০ টা বেজে গিয়েছিল।

2 Comments

  1. Tamal Anwar

    খুব ভাল লাগলো সম্পুর্ন ট্রাভেলিং এক্সপিরিয়েন্স টা। মনে হয় বেশির ভাগ সময় ওয়েটিং আর জার্নিতেই চলে গেছে।

    Reply
    • DJ Rony

      বাসে গেলে এমনটাই হয়।

      Reply

মন্তব্য

দেলোয়ার জাহান

মনের একান্তে কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমাকে। সে সকল হাবিজাবি জীবন দর্শন আর কিছু অসময়ের কাব্য নিয়ে আমার লেখালেখির ভুবন।

Pin It on Pinterest

Share This