অথচ এমন একটা বিষন্ন দিনে আমার রাস্তায় থাকার কথা ছিল
শহরের উপর ঝুলে পড়া মেঘ, আর অন্ধকারে ব্যস্ত মানুষের পলায়ন
আমি রেস্টুরেন্টের চারতলা থেকে দামি মগে বিস্বাদ কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে
মানুষ দেখছিলাম।
শহরের কোনের এক পানশালা- আমার সেখানে থাকার কথা ছিল
সেখানে কেউ মিথ্যে বলে না
রিকশায় খোলা চুলের তরুণী- আমার তার পাশে থাকার কথা ছিল
ওরা জগতের প্রেমটুকুই শুধু চিনেছে
কিশোরের বুক পকেটে অহংকার – আমার সেখানে থাকার কথা ছিল
তার চোখে মিথ্যে বিপ্লবের স্বপ্ন
ধানক্ষেতের আইল ধরে ফিরে আসা কৃষক – তার মুখের হাসি হবার ইচ্ছে ছিল
এবার ফসল ভালো হয়েছে।
অনেক জায়গায় শেষবার যাবার কথা ছিল, কারো মনে প্রেম হবার ইচ্ছে ছিল
অথচ আমি দাঁড়িয়ে মানুষ দেখছিলাম।
অনেকেই কথা রাখেনি, আসবে বলেও আসেনি
“আবার দেখা হবে” বলেও দেখা করেনি
আমি সেসব ভূলে আমার উঁচু ইমারত থেকে একটা বিষন্ন রাস্তা দেখছি
পিপড়ার মত মানুষ, সারাদিন ব্যস্ত থাকে রাতে নিশ্চিন্তে ভরপেটে ঘুমাবে বলে।
আমার খুব কাছের বন্ধু একদিন বলেছিল, দেখিস আমরাও এক সময় অনেক উঁচুতে উঠে যাব –
পৃথিবীর কোন ক্ষুধা আমাদের ছুঁতে পারবে না। আমরা পাখির মত স্বাধীন হব!
স্কুলে আমাদের টিফিন খাবার টাকা কম পড়েছিল সেদিন।
অনেক বিষণ্ণ দিনে এখন তার কথা মনে হয়-
শুনেছি সে দ্বিতীয় বিয়ে করে বেশ সুখে আছে, শুধু আমাদের দেখা করার সময় হয় না।
বহুজাতিক কোম্পানিতে সে অনর্গল মিথ্যে বলে পয়সা কামায়।
জানিনা সে স্বাধীনতা পেয়েছে, নাকি নিজেই খাঁচা কিনেছে থাকবে বলে।
মানুষ আসলে স্বাধীনতা চায় না
সে চায় তার খাঁচাটা তিনহাজার স্কয়ারফিটের হোক।
এক মাতাল তরুণী একবার আমাকে বলেছিল ভালোবাসা বলে কিছু নেই
যা কিছু মর্ত্যের সব কিছু ঐ নোনা স্বাদের জন্য, জিহ্বার আস্ফালন আর ক্লান্ত শরীর
আমি নোংরা বলে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, বলেছিলাম ধর্মত তুমি অপবিত্র
অথচ মাতালেরা মিথ্যে বলে না।
সেদিন আমি পাপের ভয়ে সত্য ঠোঁটে ছোয়াই নি।
এখন দিনভর মিথ্যে মানুষদের মাঝে বাস করি।
আমার খুব শখ ছিল পৃথিবী ঘোরার, ভূমধ্য সাগরের পাড়ে কোন এক দ্বীপে স্বেচ্ছা নির্বাসনের
আর যারা মাতৃভূমিকে অসম্ভব প্রেম করত, বাংলায় একশতে নিরানব্বই পেত
তারা এখন সব নির্বাসনে।
অথচ আমি এখনও পিপিলিকার মত মানুষ দেখি।
সেদিন এক রিকশাওয়ালা দেশ নিয়ে আমাকে অনেক জ্ঞান দিল
যাবার সময় ভাংতি নেই বলে দশটাকা বেশি নিল সেই জ্ঞানের ভারে-
তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছি। নিতান্তই তুচ্ছ হলেও মানব জীবন –
দেশ বলে আসলে কিছুই নেই – সব বিভ্রম
যার সাথে দেখা হবে বলেও দেখা হয়নি তাকেও মনে রেখেছি
যে প্রতিদিন দুবেলা নিয়ম করে আমাকে ভুলে যায়
তাকে ভালোবেসে জীবনের খাতায় যোগ করেছি।
অথচ আমার থাকার কথা ছিল ঐ মেঘঝুলে থাকা ঘাসের পথে।
আমি উঁচু দালান থেকে দামি কফির ঘ্রান নিতে নিতে নিজস্ব ইউটোপিয়ায় মগ্ন রয়েছি।
এমন কেন হয়? যে জীবন আমরা চাইনা, তা হুট করে পেয়ে যাই!
অথচ যার ভালোবাসার কাঙ্গাল হই সে আমাকে কাঁচ ভাবে?
আমি জটিল মানুষ হতে চাইনি, নিরবতা আমার খুব অপছন্দের
আমি চেয়েছিলাম মানুষ আনন্দে আর প্রেমে মাতাল হোক
মদের গ্লাস হাতে নিয়ে বলুক – পৃথিবীটা সুন্দর, আমরা যুদ্ধে যাবো না।
আর কেউ শহীদ বা বীর উপাধি না পাক – তারা বেঁচে থাকুক
উপভোগ করুক মহাবিশ্বের সংগীত।
এই নক্ষত্রের নীচে ভালো থাকুক তারার সন্তানেরা
তারা গ্যলাক্সি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক, প্রজাতির বিবর্তনে তারা অমর হোক।
অথচ কি কঠিন গাণিতিক হিসেবে আমরা ভূল করে যাই
প্রজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ভাবি আমরা প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
0 Comments