।। এক ।।
সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় উঠতে উঠতে মাহিরের চোখ আটকে গেল মেয়েটার দিকে। মেয়েটা নামছে, মাহির উঠছে।
মাহির একটা হার্টবিট মিস করল। বুকের ভেতরটা মনে হচ্ছে কেউ খামচে ধরেছে হঠাৎ করে। রেলিং এর পাশে সরে গিয়ে নিচে নামার জায়গা ছেড়ে দিল মেয়েটিকে মাহির। চোখ তখনও মেয়েটির দিকে। মনে হচ্ছে একটা ভালোলাগার সাবলীল ঢেউ চলে যাচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে।
মাহিরের মনটা খারাপ হয়ে গেল? কি যেন একটা না পাওয়ার বেদনায়। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে।
অথচ এরকম হবার কথা না। মাহির মেয়েটাকে চেনে না। আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। ইদানিং সুন্দর মেয়ে দেখলে কেমন যেন একটা মন খারাপ ভাব হয়। আর এই মেয়েটা বুকের স্পন্দন কমিয়ে দেবার মত সুন্দর।
মাহিরের প্রচন্ড রাগ হবার কথা। কারন কিছুক্ষন আগেই পাড়ার চায়ের দোকানে ছোটখাট একটা মারামারি হয়ে গেছে। পাশের এলাকার দুটো বেয়াদব একটা রিকশায় যাওয়া মেয়েকে টিজ করেছিল। মাহির প্রতিবাদ করায় এক কথায় দু-কথায় হাতাহাতি থেকে মারামারি।
মাহিরও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। বেশ কয়েক ঘা লাগিয়েছে দু-জনকেই। নিজের চোয়ালে আর পেটে কয়েকটা ঘুষিও খেয়েছে। এরপর পাড়ার আরো কয়েকজনের সহায়তায় ছেলেদুটোকে আচ্ছা ধোলাই দেয়া হয়েছে।
মাহির জানে এই মারামারিটার শেষ এখানেই নয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবে এই বখাটে দু-জন। তবে এরপর থেকে তারা যখনই কোন পথচলতি মেয়েকে টিজ করার কথা মনে করবে, মাহিরের চেহারা তাদের মনে পড়বে আগে।
বাসায় ঢুকেই মা’র মুখোমুখি পড়ে গেল মাহির। সাবিহা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাহিরকে দেখছেন।
ঃ কি হল? অমন করে তাঁকিয়ে আছো কেন?
ঃ মারামারি করেছিস?
ঃ তোমাকে কে বলল?
ঃ তোর শার্টের দুটো বোতাম ছেড়া, বাম চোখের নিচে আলু হয়ে আছে। ডান হাতের আঙ্গুলের চামড়া ছিলে গেছে।
ঃ বাহ, তোমার অবজার্ভেশন পাওয়ারতো মারাত্মক। গোয়েন্দা হলে ভালো করতে? মাহির হাসে।
ঃ প্রত্যেকটা মা-ই তার সন্তানের জন্য গোয়েন্দা। আর ছুটির দিনে যখন তুই দুপুরবেলা খাবার জন্যে ঘরে ফিরবে না তখন অনেক কিছুই দেখতে হয়।
ঃ হুম – তোমার কথায় যুক্তি আছে। আমি গোসল করে আসি, ভাত খাব।
ঃ মারমারি কেন করেছিস বলবি না?
ঃ তেমন কিছু না মা। ইভটিজিং ঘটিত ব্যাপার। কয়েক ঘা লাগিয়ে দিয়েছি শুও… । মাহির থেমে যায়। মার সামনে গালাগালি করাটা সমীচীন হবে না।
সাবিহা আর কিছু বললেন না। ছেলে বড় হয়েছে। তার নিজের বিচার-বুদ্ধি আছে। মা হিসেবে তিনি ছেলেকে যথেষ্ট ভালভাবে বড় করতে পেরেছেন। শুধু একটা ভ্রূকটি করলেন।
ঃ তুই বড় হয়েছিস এখন। এ সকল মারমারি এখন তোকে শোভা পায় না। গোসল করে আয় খাবার দিচ্ছি।
মাহির নিজের রুমে চলে গেল। মনে মনে মার তারিফ না করে পারল না। এই মহিলা আর দশজন মায়ের মত হিন্দি সিরিয়াল দেখে প্রভাবিত হন না। ছেলেকে বকাঝকা করাও তার ধাতে নেই। যদি শাস্তি দিতে হয় সেটা অন্য ভাবে দেবেন। সেই ছোট বেলা থেকেই মাহির দেখে আসছে।
শাওয়ার এর পানি গড়িয়ে পড়ছে আর মাহির চিন্তা করছে, মেয়েটা কি তাহলে মাহিরকে এই অবস্থাতেই দেখেছে? কি ভেবেছে, বখাটে একটা মারামারি করা লাফাঙ্গা ছেলে?
…ধুর… মেয়েটা আমার দিকে তাঁকায়-ই নি। এত কিছু দেখবে কি করে? আর দেখলেই কি সে তো আর পরিচিত কেউ নয়। প্রেমিকাও নয়। আবার এই মেয়ের সাথে দেখা হবার সম্ভাবনাও নেই। আফসোস …… এরকম কারো সাথে বন্ধুত্ব হলে মন্দ কাটত না জীবনটা।
সাত-পাচঁ ভাবা বাদ দিয়ে মাহির শাওয়ার থেকে বের হল। কিন্তু সুন্দর মুখটা কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারল না।
ঃ কিরে এত লম্বা সময় নিয়ে গোসল করলি। খাবারতো প্রায় ঠান্ডা হয়ে গেছে!
ঃ সমস্যা নেই মা, একবেলা ঠান্ডা খাবার খেলে কিছু হবে না। আর তুমি যা রান্না কর তাই অমৃত।
সাবিহা বেগম হাসলেন।
ঃ তোর বাবা অফিসের কাজে গাজীপুর গেছেন। তোকে একটু অর্নাকে আনতে যেতে হবে।
ঃ কেন, অর্না আবার কোথায় গেল? বাসায় নেই?
ঃ না, ওর কলেজের পিকনিক ছিল। ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বাজবে। আমাকে ফোন করে বলেছে। মগবাজারে ওর কলেজটা চিনিস না? ওখানে গিয়ে ওকে নিয়ে আয়।
ঃ তাইতো বলি মহারানীকে দেখছি না কেন? আমিতো ভেবেছিলাম ফেইসবুক নিয়ে ব্যাস্ত।
ঃ বাজে বকিস না। মেয়েটা প্রচুর পড়াশোনা করে।
ঃ আমাকে আগে বলবে না। আর এখনই তো ছটা বাজে। আমাকে ফোন করে বললে আমি ওকে নিয়েই আসতাম।
ঃ তুই যে এত লম্বা সময় নিয়ে গোসল করবি সেটা কে জানতাম?
ঃ ওর বয়ফ্রেন্ড নাই? সেওতো অর্নাকে পৌঁছে দিতে পারে।
ঃ মাহির … এবার সাবিহা বেগম গলা চড়ান। তুই যাবি না আমি যাব?
ঃ রাগ কর কেন মা! আমি তো মজা করছিলাম। মাহির কপট হাসি দেয়। আর এখন কলেজের মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকাটা একটা ফ্যাশন। স্কুল থেকেই চালু হয়ে যায় সব।
সাবিহা বেগম কিছু বললেন না। ছেলের সাথে এই ব্যাপারে তার আলোচনা করতে মন চাইছে না। এইসব মাহির আলোচনা করবে তার বাবার সাথে। কিন্তু প্রকৃতির অদ্ভুত কারনেই ছেলেরা একটু মা ঘেষা হয়। এই কারনে প্রেমিকা খুঁজে বেড়ালেও তার মাঝে মায়ের ছাপ খোঁজে।
মাহির আবার বলা শুরু করল।
ঃ একটা ছেলে ক্লাস এইটে ওঠার পর থেকেই সব কিছু বুঝতে পারে। ক্লাস টেনে ওঠার পর মোটামুটিভাবে একটা ইচড়ে পাকা হয়ে যায় বন্ধুবান্ধবের কল্যানে। সে হিসেবে বাংলাদেশের মেয়েরা আরো দ্রুত ম্যাচিউরড হয়ে যায়। ভুল বলিনি।
ঃ বকবক বন্ধ কর। আর ম্যাচুরিটি দেখিয়ে বড় ভাইয়ের মত গিয়ে বোনটাকে নিয়ে আয়।
ঃ যাচ্ছি। মাহিরে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। বোনকে আনতে যাবার মত গুরু দায়িত্ব নিয়ে তার মাথাব্যাথা নেই। নিচে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাতে হবে আগে। বাইকের চাবিটা নিয়ে মাহির বের হয়।
|| দুই ||
বেলায়েত হোসেন তার সামনে বসা লোকটার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছেন। তার ফ্যাক্টরির ফোরম্যানের কাছে চাকরির কথা বলে ঢুকেছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঘটনা ভিন্ন। এই লোক ইনিয়ে বিনিয়ে চাঁদা চাইতে এসেছে।
ঃ কিসের অনুষ্ঠান বললেন?
ঃ … এই যে এলাকার উন্নয়নের জন্য বারেক ভাই একটা সমাবেশ করবে। সেখানে সবাই দিচ্ছে খুশি হয়ে। আপনার ফ্যাক্টরির আশেপাশের সবাই দিয়ে দিয়েছে। এলাকার গন্যমান্যরা আসবে, খাওয়া দাওয়া হবে… আপনাকেও দাওয়াত দিয়ে যাবো ভাই।
বেলায়েত হোসেন বিরক্ত। তার সরু চোখে এবার কিছুটা হতাশা ফুটে উঠছে। এই দেশে এরকম ফাও খাবার মত লোক অনেক। এরা রাজনৈতিক দলের লেজ ধরে আশেপাশের সবার কাছ থেকে ফ্রি খাবারের আশায় থাকে। যেহেতু ইগোর কারনে ভিক্ষা করে খেতে পারে না, তাই মধুর কথায় চাঁদাবাজি করে বা ভাইয়ের নামে পোস্টার লাগায়।
ঃ আপনার নাম কি? বেলায়েত হোসেন বিরক্তি নিয়ে বললেন।
ঃ নোমান…। আপনাকে বলেছি একবার।
শুনেও না শোনার ভান করলেন বেলায়েত হোসেন। তিনি যখন ছাত্র ছিলেন স্টুডেন্ট পলিটিকস করেছেন অনেকদিন। এক নামে তাকে সবাই চিনত তখন। এখনো ক্ষমতাসীন দলের দুজন মন্ত্রীর সাথে তার সখ্যতা আছে। দু”চারজন আমলা বন্দু-বান্ধব আছে। কোথাকার কোন পাতি নেতা এসে তার কাছে চাঁদা চাইবে সেটা তার ভালো লাগছে না।
ঃ আপনি করেন কি?
ঃ বলেছিলাম তো… আপনার ফোরম্যান বলেনি?… আমি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ভাইয়ের খুব খাস লোক।
ঃ আপনার ভাই পাঠিয়েছে আপনাকে এখানে?
ঃ জ্বী…।
“বারেক এখানে এককাপ চা দিয়ে যাও” – বেলায়েত হোসেন জোরে হাঁক দিলেন। তার পিয়নের নাম বারেক না। তিনি ইচ্ছা করে এটা করলেন, সামনে বসা নোমান নামের ছেলেটাকে ভড়কে দেবার জন্য। কিছুক্ষন আগেই সে বলেছে “ আমি বারেক ভাইয়ের খাস লোক”।
নোমান কিছুটা চমকালেও, মুখের হাসি ধরে রাখল। এইরকম গাড়ল সে অনেক দেখেছে। এতদিন ধরে ভাইয়ের সাথে আছে। ভাই তাকে সেখানেই পাঠায় যেখান থেকে কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে। অহেতুক মানূষের সাথে দরকষাকষি তার পছন্দ না। এলাকায় থাকতে হলে বারেক ভাইয়ের ফান্ডে কিছু মালপানি ঢিলা করতেই হয়। সামনের এই গাড়ল সেটা করতে চাইছে না। এর আগেও তার ম্যানেজারের কাছে খবর পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু ম্যানেজার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বসের হুকুম বাদে কোন ডোনেশন সে দিতে পারবে না।
আজকে তাই তৈরি হয়েই এসেছে নোমান। দরকার হলে কোমরে গোজা মেশিন দেখাবে। বেশিরভাগ ফিটফাট মানুষই মেশিন দেখলে ঘাবড়ে যায়। আদব লেহাজ ভুলে তখন নোমানকেই ভাই ভাই সম্বোধন শুরু করে। বারেক কে, সেটা আর খোঁজ নিতে যায় না।
এই সময় পিয়ন হাতে করে এক কাপ চা নিয়ে ঢুকল। নোমান ভেবেছিল তার জন্য চা এনেছে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখল চা এনে সে বেলায়েতের সামনে রাখল। তার দিকে একবার ফিরেও তাঁকাল না। আবার কানের কাছে কি যেন ফুসুর ফুসুর করে বলে গেল। বেলায়েত হোসেন স্মিত হেসে মাথা ঝাঁকালেন।
নোমান শিওর এই লোকের পিয়নের নামও বারেক না। তাকে অপমান করার জন্য পিয়নকে এই নামে ডেকেছে বেলায়েত।
বেলায়েত হোসেন চায়ে চুমক দিলেন। আবার সরু চোখে তাঁকালেন নোমানের দিকে।
ঃ আপনি কি করেন সেটা কিন্তু বলেননি!
নোমানের মেজাজ কিঞ্চিত চড়ে গেল। সে ভুরু কুঁচকে বলল – আমি রাজনীতি করি ভাই। মাঝে মাঝে বারেক ভাই আমাকে তার খাস কাজে পাঠায়।
ঃ আমার কাছে কি খাস কাজ? নির্বিকার বেলায়েত হোসেন।
নোমান এবার তার কঠিন পিলে চমকানো হাসি দিলো। নিঃশব্দ হাসি, কিন্তু তাতে সামনের লোকের প্রতি এক অদ্ভুত ঘৃনা আর তাচ্ছিল্য।
ঃ কিছু মালপানি ঢিলা করেন। আপনে বোকা না। কেনও আসছি বুইঝাও না বোঝার ভান করেন ক্যান?
বেলায়েত হোসেনের কোন ভাবান্তর নেই। তিনি চায়ে দ্বিতীয় চুমক দিয়ে নোমানের পেছনে তাঁকিয়ে রইলেন।
ঃ এলাকায় থাকতে হলে… ব্যবসা করতে গেলে এইরকম কিছু মালপানি ছাড়তেই হয়। ভালোয় ভালোয় ঝামেলা না করে পকেট ঢিলা করে দেন। আমরাও খুশি, আপনেও খুশি। কোন দরকারে লাগলেই আমারে ফোন দিবেন, বান্দা হাজির হয়ে যাবো। আমরা আপনারে দেখব… আপনি মাঝে মাঝে আমাদের দেখবেন।
ঃ কাকে দরকারে লাগবে, তোমাকে না বারেককে? বেলায়েত এবার আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছেন। তার ঠোনের কোনায় একচিলতে হাসি।
নোমানের হিসেবে গড়মিল হয়ে যাচ্ছে। ফ্যাক্টরির বাইরে তার চার–পাঁচজন লোক আছে। এক মূহুর্তের নোটিশেই তারা ভিতরে চলে আসবে। এই লোক এমনিতে ভয় পাবার না বোঝা গেছে। কোমরে হাত দিয়ে সে মেশিনটা বের করতে যাবে, এরকম সময় তার হাত পেছন থেকে কে যেন চেপে ধরল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চেয়ার থেকে তাঁকে অনেকটা খেলনার মত তুলে, মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল। এরপর সব অন্ধকার।
নোমানের জ্ঞান ফিরে সে নিজেকে আবিষ্কার করল অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে। এই প্রথম সে ভয় পেয়েছে। গায়ে একসুতো কাপড় নেই। দিগম্বর করে ফেলে রেখেছে এখানে। মাথায় হালকা ব্যথা, শরীরে নিচের অংশ অবশ হয়ে আছে।
তার এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে বড় ধরনের ঝামেলায় সে পড়ে গেছে। বেলায়েত হোসেনকে চিনতে সে ভুল করেছে। বারেক ভাইও এখান থেকে তাকে বের করে নিয়ে যেতে পারবে না। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
চোখে অন্ধকার একটু সয়ে এলে সে দেয়াল হাতড়ে চলে এলো দরজার কাছে। লোহার দরজা, বাইরে থেকে লাগানো।
ঃ কেউ আছেন?… একটু পানি দেবেন। দরজায় কয়েক ঘা দিল সে দূর্বল শরীরে।
কোন সাড়া শব্দ নেই। এখন কটা বাজে সেটাও সে জানে না। এখানে কতক্ষন হল তাকে ফেলে রেখেছে কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথায় খালি ঘুরছে “ এরা তাকে মেরে ফেলবে… তারপর পুড়িয়ে মাটি চাপা দেবে।”
মরতে যখন হবেই… পিপাসা নিয়ে মরার কি দরকার। ভরা পেটে মাথা ঠান্ডা করে খোলা আকাশের নিচে মরতে হবে। পেট ভরা থাকলে কবরের পোকামাকড় আরও বেশি কিছু খাবার পাবে। নোমান জানে যে পাপ সে করেছে তার জন্য কঠিন আযাব অপেক্ষা করছে সেখানে। পোকামাকড়ের কিছু উপকার যদি হয় সে মরার পর ক্ষতি কি?
ঃ একটু পানি দেবেন… মরার আগে পানি খেয়ে মরতে চাই। ফাঁসির আসামিরেওতো আপনারা খাইতে দেন।
কেউ সাড়া দিল না। নোমান দরজার কাছে দেয়াল ধরে বসে পড়ল। মিনিট পাঁচেক পরে কারো পায়ের আওয়াজ পেলও সে। দরজা খুলে ভেতরে এসেছে দু’জন লোক। লজ্জা ভুলে নোমান আবার পানি চাইল।
বাইরের কিঞ্চিত আলোতে সে একজনকে চিনতে পারল, বেলায়েত হোসেনের পিয়ন বারেক আর সাথের বিশালদেহী লোকটাকে চেনা গেলো না। মুখ চোখ পাথরের মত শক্ত করে তাকে দেখছে। সামনের ঠোঁটের উপরে একটা গভীর ক্ষত আছে লোকটার। এরা কেউই তাদের চেহারা লুকানোর চেষ্টা করছে না।
এর মানে নোমান জানে, এরা তাকে মেরে ফেলবে।
পিয়ন বারেকের হাতে একটা ট্রে ছিল। সেটা নামিয়ে রাখল সে। কোন কথা না বলেই বিশালদেহীকে নিয়ে আবার বেরিয়ে গেল।
হামাগুড়ি দিয়ে ট্রের কাছে গেল নোমান। পাকা রসালো তরমুজ আর একটা পানির বোতল। মরতে যখন হবেই খেয়েই মরি। এত মিষ্টি তরমুজ নোমান কখনো খেয়েছে কিনা বলতে পারবে না। তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।
……চলবে
0 Comments