আমার মেয়ে আলিনা কম্পিউটারে গেইম খেলতে খেলতে হঠাত করে আমাকে জিজ্ঞেস করল বাবা তোমার জব কি?
আমি পড়ে গেলাম কিঞ্চিত চিন্তায়। আসলেই তো তাকে কিভাবে বোঝাই আমার আইটি প্রফেশনের কথা। আমার কাজ নিয়ে তার সাথে কখনোই আলোচনা হয়নি।
– আমি একজন আইটি প্রফেশনাল মা। ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট আর মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে কাজ করি।
– ও… । যদিও বুঝতে পারছি আলিনার কিছুই মাথায় ঢোকেনি। আমি গতানুগতিক নয়টা-পাঁচটা জব করি না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। সে গল্প কখনো করা হয়নি।
অনলাইনে কাজ করে টাকা পাওয়া যায় এটা আমার বাবাই প্রথমে বিশ্বাস করতেন না। পরের দিকে তিনি আমার ব্যাপারে অনেক সচেতন হয়েছিলেন, যদিও তার আফসোস থেকে গেছে আমার ব্রিলিয়ান্ট ছেলে যে চাইলেই ভালো জব করতে পারত তার সেদিকে আগ্রহ নেই।
কিন্তু আমি আজীবন স্বাধীনচেতা মনোভাবে বড় হয়ে ওঠা মানুষ কখনো বৃত্তের ঘেরাটোপে আবদ্ধ হতে চাইনি।
আমার এই দীর্ঘ ১২ বছরের আইটি ক্যারিয়ারে আমি যে কোম্পানির উপর কৃতজ্ঞ তাদের নাম পেওনিয়ার। এরা একটা মানি ট্রান্সফার কোম্পানি।
এটা একটা আক্ষেপমূলক পোষ্ট… চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারেন। কিছুটা তুলনাও চলে আসবে দেশী ব্যাংকিং সিস্টেম এবং কার্ডের সাথে।
পেওনিয়ারের সাথে আমার সম্পর্ক ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই। ফ্রি-ল্যান্সিং যখন শুরু করেছিলাম তখন আমি স্টুডেন্ট। বন্ধুকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম সিটি ব্যাংকের এক শাখায়। জানতে চাইলাম – “চাইলে কি প্রিপেইড ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে পারব নাকি? আমি টাকা রাখব আর সেটা ডলারে খরচ করতে পারব! এরকম কিছু তারা দিতে পারবে নাকি?”
সেখানে এক ভদ্রলোক আমাকে বলে দিলেন ৫০ হাজার টাকা এফডিআর করলে এরকম কার্ড মিলতে পারে, সেটা বাদে তাদের কিছু করার নেই। ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এসেছিলাম, কারন ৫০ হাজার তখন আমাদের জন্য অনেক টাকা।
সময়টা ২০০৫ বা ২০০৬ হবে। তখনও সিটিম্যাক্স কার্ডের আমদানি হয়নি মার্কেটে। ডুয়েল কারেন্সি বলতে কি বোঝায় মোটামুটি অজ্ঞ ছিলাম।
এর সপ্তাহখানেক পরেই পেওনিয়ারের সন্ধান পেলাম। আমাদের জন্য সেটা ছিল সোনার হরিনের মত। ফ্রি-কার্ড আর মার্কেট প্লেসে কাজ করলেই ডলার লোড করা যায় সেখান থেকে। এখন আর ডোমেইন হোস্টিং কিনতে আমাদের কোন সমস্যা পোহাতে হয় না। পেওনিয়ারের হাত ধরে শুরু হয়েছিল সেসময় ক্যারিয়ারের পথচলা। বলা চলে অনেকটা নির্ভার ভাবেই এই পেশা বেছে নিতে পেরেছি আমি শুধু মাত্র এই কার্ডের কারনেই।
এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকটা বছর। এই দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় আমি পেওনিয়ারের সার্ভিস ব্যবহার করেছি, এখনও করছি। এক সময়ের প্রিপেইড কার্ড এখন ডেবিট হয়েছে, কারেন্সি ব্যবহারের সুবিধা, ব্যাংক ট্রান্সফার অনেক কিছু এসেছে এর সার্ভিসে।
পেওনিয়ারের চার্জ বেশি হলেও কখনই আমার গায়ে লাগেনি। কারন এ বাদে আর কোন সহজ রাস্তা আমার জানা ছিলও না। ২০২১-২২ এ এসে যে কার্ড ব্যবহার করছি সেটা পেওনিয়ারের ৯ নাম্বার কার্ড। অর্ডার করে বলেছিলাম আমার দেশের পোস্টাল সিস্টেম ভালো না, এর আগেও কার্ড পাইনি, দয়া করে DHL এ পাঠাও। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ৪ দিনের মাথায় নরমাল পোস্টে কার্ড ইউকে থেকে হাজির!
এখন মনে হচ্ছে আরেকটা কার্ড তারা ইস্যু করে দিয়েছে যেটা DHL এ আসবে 🙂 । কি মুসিবত!
এমন না যে আমি পেওনিয়ার বাদে অন্য কোন কার্ড ব্যবহার করি না। বেশ ক’খানা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দেশি-বিদেশী মিলে এখন আমার আছে। সময় বদলেছে – পেওনিয়ার বাদেও এখন আমার চলে যায়। কিন্তু মায়া ছাড়তে পারি না।
দেশের কোন কার্ডই পেওনিয়ারের মত গ্লোবালি আমাকে সাপোর্ট দেয় না। এন্ডোর্স্মেন্ট এর প্যাড়া আর ১২০০০ ডলারের কোন লিমিট নেই। বেশ কয়েকবার ডিসপুট ক্লেইম করেছি, তারা দ্রুত সাড়া দিয়ে রিফান্ড করে দিয়েছে।
একটা প্রিপেইড কার্ড (এখন ডেবিট – কমার্শিয়াল) দিনে ৭০০০ ডলার পজে খরচ করতে দেয় আর মাসে ১১০,০০০ ডলার উইথড্র করতে দেয়, এটা আসলে আমার জন্য অনেক কিছু। এই কোম্পানি পৃথিবীজুড়ে ব্যবসা করছে, চার্জ বেশি কারন তারা যে সার্ভিস দেয় সেরকম আর কেউ দিতনা। এখন WISE এসেছে, যদিও আমাদের দেশে কার্ড দেয় না।
আমার মনে আছে সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিতে আমাকে নিজেরই একমাইল দূরে গিয়ে কালেক্ট করতে হয়েছে, তাও সাপোর্টে মেইল দেয়ার পর। ভাউচার কালেক্ট করার প্যাড়াও অনেক ছিল।
কিন্তু গত ১৫+ বছরে পেওনিয়ার কার্ড আমার সংঙ্গী ছিল। কোন কারনে একাউন্ট বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে।
অথচ… পেওনিয়ার নিজে কোন ব্যাংক নয়!
আমাদের ব্যাংকগুলো এবং এদের কার্ডের আরো অনেকদূর যাবার আছে। পেওনিয়ার, ওয়াইজ এরকম বিজনেস মডেল এবং তাদের সার্ভিস থেকে শেখার আছে। অহেতুক লিমিট, এন্ডোর্স্মেন্ট, ডায়নামিক কারেন্সি না হওয়া, ট্রাঞ্জেকশন এমাউন্ট আর নাম্বারের প্যাড়া – এরকম হাজারো ঝামেলা তারা বাদ দিতে পারে চাইলেই। দরকার স্বদিচ্ছা।
দয়া করে কেউ বলবেন না এন্ডোর্স্মেন্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার রোধ করা হয়। অর্থ পাচার একটা আন্তর্জাতিক ব্যবসা!
0 Comments